নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি::
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশী কাঠুরিয়া জসিম উদ্দিন আহত হওয়ার পর ৫০ বিজিবির নবাগত অধিনায়ক লে: কর্নেল গোলাম মন্জুর ছিদ্দিকী গতকাল বৃহস্পতিবার সীমান্তবাসীর সাথে দফা্য় দফায় সচেতনতামূলক বৈঠক করেছেন । আশারতলী বিজিবি’র সীমান্ত চৌকিতে (বিওপি-বর্ডার অবজার্ভেশন পোষ্ট) প্রথম দফার বৈঠকে অনুষ্ঠিত এ সভায় ৪৫ সীমান্ত পিলারের আশপাশের অন্তত ৪ গ্রামের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিজিবি অধিনায়ক উপস্থিত লোকজনকে সীমান্ত শান্ত রাখতে ৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন এ সময়। এদিকে ঘটনার বিষয়ে বিজিবি কর্তৃপক্ষ ফোনে মিয়ানমার বাহিনীর কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার সকালে। আজ জুমাবার এ বিষয়ে লিখিত প্রতিবাদ পাঠিয়ে পতাকা বৈঠকের প্রস্তাবও দেবেন তিনি মিয়ানমারের বাহিনীকে।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার ৪৫ সীমান্ত পিলারের সাব-পিলার এক ও দুই এর মাঝে সেগুন বাগানের মাথা নামক এলাকায় কাঠ কাটতে যায় ২ কাঠুরিয়া। এদের একজনের নাম জামছড়ি গ্রামের মৃত মোজাহের আহমদের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৫)। অপর জনের নাম মো. আমিন (৩২)। তার পিতার নাম মো: ছৈয়দ্। তারা স্থানীয় লাকড়ি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের শ্রমিক। জামছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ছৈয়দ নূর,নূর আহমদ,ছৈয়দ আজিম সহ অনেকেই জানান,ঘটনার দিন বেলা ১১ টায় তারা দু’জনই সীমান্তের উক্ত পয়েন্টে গিয়ে কাঁটা তারের কাছাকাছি জিরো পয়েন্টে লাকড়ি কাটছিল মনোযোগ দিয়ে। অবশ্য কাঠুরিয়া জসিম থেকে ১০ গজ বাংলাদেশ অংশের ভেতরে লাকড়ি কুড়াচ্ছিল মো: আমিন। এ কারণে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর একটি টহল দল মো: আমিনকে টার্গেট না করে পাশে থাকা জসিম উদ্দিনকে লক্ষ্য করে পরপর ২ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে । এতে প্রথম গুলিটি জসিমের ডান হাতের বগলে বিদ্ধ হয়। অবশ্য পরের গুলিটি বিজিপি’র লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে যায়।
এঅবস্থায় আহত জসিমকে কাঠুরিয়া মো: আমিন প্রায় ২ মাইল দূরে নিরাপদে নিয়ে আসে অতিকষ্টে । আর জামছড়ি ইমাম হোসেনের দোকান পর্যন্ত নিয়ে আনে আবুল কালাম নামের অপর শ্রমিক। আহত জসিমের পারিবারিক সূত্র দাবি করে-প্রশাসনের ভয়ে তারা জসিমের চিকিৎসার খবর জানাতে ভয় পেয়েছিল গত বুধবার সারাদিন। বর্তমানে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে স্বীকার করেন জসিমের পরিবারের সাথে বিজিবি কর্তৃপক্ষও।
এদিকে কাঠুরিয়া জসিম আহত হওয়ার পর বিজিবি অধিনায়ক গতকাল আশারতলী বিওপি এলাকায় এলাকাবাসিকে নিয়ে এক সচেতনতামূলক সভা করেন। সভায় সীমান্তের চেরারকূল, প্রধানঝিরি,আশারতলী ও জামছড়ি গ্রামের সচেতন ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ৫০ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল গোলাম মন্জুর ছিদ্দিকী তাদেরকে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। ৫টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- কোন লোক যেন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে না যায়, চুরি-ডাকাতির কাজে যেন কেউ লিপ্ত না হয়,আইন বিরোধী কোন কাজে যেন কেউ সহায়তা না করে, ভাল-মন্দ যে কোন জরুরি খবর পার্শ্ববর্তী বিজিবি ক্যাম্পে যেন অবহিত করে ও গ্রামের মানুষকে যেন এসব বিষয় উপস্থিত সকলেই দ্রুত জানিয়ে দেয়। বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল গোলাম মন্জুর ছিদ্দিকী আরো জানান,এভাবে আরো একটি সভা তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বাদে আছর চাকঢালা সীমান্ত ফাঁড়িতেও করেছেন। এর আগের দিন বুধবার বিকেলে করেছেন সীমান্তের ফুলতলী ক্যাম্পে।
অধিনায়ক লে: কর্ণেল গোলাম মন্জুর ছিদ্দিকী আরো জানান, বর্তমানে এ পয়েন্টে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক।