বিদেশ ডেস্ক::
মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার এক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে জড়িত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাদ্যম দ্য স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
গত বছরের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ওই অভিযানে জাতিগত নিধনযজ্ঞের আলামত পেয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ মিয়ানমারের মানবাধিকার নিয়ে এক তদন্ত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে। মিয়ানমার সরকার বারবারই দাবি করে এসেছে যে, নিরাপত্তার স্বার্থে এই অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। কোন নিধনযজ্ঞ চালানো হয়নি। তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রত্যাখ্যানের মাত্রায় তারা হতবাক। সামরিক অভিযানে কখনোই হত্যা, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, শিশু নিপীড়ন ও গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ৪৪৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেন, যে পাঁচটি নিষিদ্ধ কাজকে গণহত্যা হিসেবে গণ্য করা হয় তার চারটিই করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি শাসন ব্যবস্থায় তাদের বাড়তি প্রভাবের ইতি ঘটানো উচিৎ। এ বিষয়ে দেশটির বেসামরিক সরকারের পক্ষ থেকে আরও বেশি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের প্রধান অং সান সুচি এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা-নির্যাতনের বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে জাতিসংঘ তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তিনি রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে সরিয়ে দেয়।
গত মাসে জাতিসংঘের তদন্তরকারীরা তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সেনাবাহিনী জড়িত রয়েছে। তারা বলেছিলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যায় ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক কর্তৃপক্ষও এই নিধনযজ্ঞে ইন্ধন জুগিয়েছে। এরপর মঙ্গলবার আবারও একই আহ্বান জানালো জাতিসংঘ।
১৮ মাস ধরে তৈরি করা জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, রেহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নিরাপত্তা হুমকি বিবেচনা করে সরকারি বাহিনীর পদক্ষেপ খুবই অযৌক্তিক ছিলো।