কক্সবাংলা রিপোর্টা :: মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চালান আনতে নৌপথকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে আসছে ইয়াবা মাফিয়ারা। তারা মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে তুয়াঙ্গী-ইয়াঙ্গুন নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশি জল সীমানায়।
বাংলাদেশের মাদক মাফিয়ারা জেলে সেজে মাছ ধরার ট্রলারে করে জল সীমানা থেকে গ্রহণ করে ইয়াবার চালান।
তারপর নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুন্ড, ফিশারিঘাট, ব্রিজঘাট, মাঝিরঘাট, বরিশাল, খুলনা, বরগুনা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন নৌবন্দর এলাকায়।
মাছ ধরার মৌসুমে এ কাজটি সহজে করা যায়। বিপত্তি ঘটে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে। এ সময় নৌপথে ইয়াবা পাচার কমে আসে। মাছ ধরা চালু হলে পুরোদমে শুরু হয় ইয়াবা কারবার।
অপরাধ বিজ্ঞানী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাছের ট্রলারে জিপিআরএস বসিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে ইয়াবা বহনকারী ট্রলার চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় ইয়াবা কম ধরা পড়ার সঙ্গে নৌপথে ইয়াবা পাচারের যোগসূত্র থাকতে পারে। আমরা বিষয়টা নিয়ে কাজ করছি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ভাটা থাকে ইয়াবা ঢল। এ সময় স্থলভাগেও কমে আসে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ফের মিয়ানমার থেকে নামে ইয়াবার ঢল। এ সময় ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা এবং মাছের বংশবিস্তারে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। যা গত ১৯ মে মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
এ সময় ইয়াবার ঢল ও ভাটার চিত্র উঠে এসেছে। সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধের আগে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চল মার্চ মাসে ইয়াবা উদ্ধার করে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৬৮ পিস। এপ্রিলে ২ লাখ ৫ হাজার ৮৬০ পিস এবং মে মাসে উদ্ধার করে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫২৬ পিস।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জুন মাসে ইয়াবা উদ্ধার করা হয় ২ লাখ ৪০ হাজার ৪৭১ এবং জুলাই মাসে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮ পিস। সাগরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরের মাস আগস্টে ইয়াবা উদ্ধার বেড়ে যায় তিন গুণ। এ মাসে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৭৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চল।
১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দেড় শতাধিক অভিযান চালিয়ে ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব-৭। স্বাভাবিক সময়ে গড়ে সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করলেও মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময় তা নেমে আসে আড়াই লাখে। একই চিত্র দেখা যায় সিএমপির ক্ষেত্রেও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধের সময় মাছ ধরার ট্রলার সাগরে যায় না। ফলে ইয়াবা বহনকারী ট্রলারগুলো ইয়াবার চালান আনতে যেতে পারে না মিয়ানমার সীমান্তে