মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তরক্ষী পর্যায়ের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। দেশটির সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি’র ৩টি পোস্টে গত ১০ই অক্টোবরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে নেপি’ডর তরফে গতকাল ওই বৈঠক আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়। ঢাকার দায়িত্বশীল একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে বৈঠক স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, আগামীকাল থেকে রাজধানীর পিলখানাস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিপি’র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৩ দিনব্যাপী ওই বৈঠক হওয়ার সূচি নির্ধারিত ছিল। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে- মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডুতে আচমকা সংঘটিত ওই হামলার পর থেকে পরবর্তী যে কোনো হামলা ঠেকানোসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশটির সীমান্ত রক্ষীবাহিনী এবং অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহেও দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের আরেকটি বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। মিয়ানমার পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এএফপি ও বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সরবরাহ করা তথ্য মতে, বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন রাজ্যের বিজিপি পোস্টে সমন্বিত ওই হামলায় মিয়ানমারে অন্তত ৯ রক্ষী-পুলিশসহ বহু হতাহত হয়েছে। হামলাকারীরা সীমান্ত পুলিশ পোস্ট থেকে ৫০টির বেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি লুট করে নিয়ে যায়। অবশ্য এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সাত হামলাকারীও নিহত হয়েছে মর্মে খবর বেরিয়েছে। ঘটনার পরপরই টেকনাফে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বর্র্ডার গার্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করে সন্ত্রাসীরা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও মুসলিম সমপ্রদায়ের মধ্যে সামপ্রদায়িক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ২০১২ সালে রাজ?্যটিতে সামপ্রদায়িক দাঙ্গায় উল্লেখযোগ?্য সংখ?্যক মানুষ নিহত ও এক লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন, যাদের অধিকাংশই মুসলিম। ১০ই অক্টোবরের হামলার পর নেপি’ডতে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের জেনারেল জাউ উইন বলেন, সীমান্ত পোস্টে হামলার সময় হামলাকারীরা ‘আমরা রোহিঙ্গা’ বলে চিৎকার করেছিলেন। তবে কেন হামলা হয়েছিল বা কারা হামলা চালিয়েছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট করে তিনি কিছু বলেননি। রাখাইন রাজ্যে সামপ্রদায়িক উত্তেজনা কমিয়ে আনতে এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিশন কাজ করছে। পুলিশ পোস্টে সন্ত্রাসী হামলার ওই ঘটনাকে সার্বিক ‘উন্নয়ন’ ব্যর্থ করার অপচেষ্টা বলে মনে করে বাংলাদেশ।