মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলো। অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক জান্তার নিপীড়নে কমপক্ষে ১ হাজার গণতন্ত্রপন্থি প্রাণ হারিয়েছেন। আর যত দিনে যাচ্ছে আরো ঘনিভূত হচ্ছে সংকট। দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাইডেন প্রশাসন।
১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারের উৎখাতে মাসজুড়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং সামরিক বাহিনীর রক্তাক্ত ক্র্যাকডাউনে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে মিয়ানমারের শীর্ষ নেত্রী অং সান সুচিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। আটক করা হয় সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ত এবং এনএলডির জ্যেষ্ঠ নেতাদের। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।
অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো মিয়ানমার। বিক্ষোভকারীদের দমাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় সেনাবাহিনী। এরপরও গণতন্ত্রের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার ছিল বিক্ষোভকারীরা। তাদের দমাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায় সেনাবাহিনী। এতে নিহত হয় বেশ কয়েকজন অন্দোলনকারী।
জতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক মিয়ানমারের জনগণ এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা এবং রোহিঙ্গাসহ সকল সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য সংহতি প্রকাশ করেছেন।
তিনি জানান, বিগত বছরে মিয়ানমারে সহিংসতার তীব্রতা, মানবাধিকার এবং মানবিক সংকটের গভীরতা এবং দারিদ্র্যের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে। সংকটের কারণে মিয়ানমারের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হচ্ছে, স্কুল ও হাসপাতাল ফাঁকা হয়ে পড়ছে। অনেকে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় লোকদের কাছে অ্যাক্সেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সশস্ত্র বাহিনী এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের অবশ্যই মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান করতে হবে।
চলমান সঙ্কট দ্বারা প্রভাবিত সকলের সাথে সরাসরি জড়িত এবং মনোযোগ সহকারে শোনার মাধ্যমে যেকোন সমাধান পেতে হবে। তাদের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে এবং প্রসারিত করতে হবে বলেও জানান তিনি।
দমন, নিপীড়ন ও সহিংসতার ঘটনায় জান্তা সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকে একের পর এক দেশ। সামরিক জান্তার নিপীড়ন আর বিদ্রোহীদের সাথে সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে প্রতিবেশি থাইল্যান্ড সীমান্তে পাড়ি জমাচ্ছে হাজারো মানুষ।
এরই মধ্যে অভ্যুত্থান বিরোধী নেতারা ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠা করে। আর জান্তা সরকার প্রধান মিন অং হ্লাইং ২০২৩ সালের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপরও মিন অং হ্লাইংকে বাদ দিয়েই আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয় রাষ্ট্রনেতারা।
এদিকে দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। সোমবার এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারক। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। জানানো হয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা ব্যাক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে যত সম্পদ রয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে কোনো যুক্তরাষ্ট্র কোন ব্যবসা করতে পারবে না। কানাডা ও বৃটেনের পক্ষ থেকেও একই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে।