কোনো রকম অপরাধ না করেও আসামি। মাথার উপর ১০ বছরের কারাদণ্ড আদেশ। গ্রেপ্তার আতংক সাথে নিয়ে পথ চলছেন। তিনি হলেন টেকনাফের হোইক্যং বালুকালি এলাকার সৈয়দ কাসিমের ছেলে নুরুল বশর। মিয়ানমারের বুচিডং চিংড়ং এলাকার নাগরিক জোহর আলমের জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন তিনি। মাদকসহ গ্রেপ্তারের সময় নিজের নাম-ঠিকানা আড়ালে রেখে নুরুল বশরের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেছেন জোহর আলম।
স্পর্শকাতর এ ঘটনায় ভোক্তভোগী নুরুল বশর গতকাল চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রতিকার চেয়ে একটি আবেদন করেছেন। আগামী ১০ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। নুরুল বশরের আইনজীবী সেলিম উল্লাহ চৌধুরী আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমার মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নন। তার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেছেন মিয়ানমারের নাগরিক জোহর আলম। বিষয়টি অবগত হয়ে তিনি আদালতের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে। আদালত আমাদের আবেদনটি গ্রহণ করেছেন এবং আগামী ১০ অক্টোবরের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
আদালতসূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়া এলাকা থেকে ২ হাজার ইয়াবাসহ জোহর আলমকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। জিজ্ঞাসাবাদে তখন নিজের নাম আড়ালে রেখে নুরুল বশরের নাম ঠিকানা ব্যবহার করেন তিনি। মাদক উদ্ধারের এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারায় রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি মামলা করা হয় এবং জোহর আলমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরের বছরের ৬ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের পরিদর্শক জীবন চাকমা আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। একপর্যায়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আদালতসূত্র আরো জানায়, বিচার চলাকালীন গত বছরের ৩ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন আসামি জোহর আলম। তখন থেকেই তিনি পলাতক। রায় ঘোষণার দিনও অনুপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে আদালত কারাদণ্ডের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেন।
আইনজীবী সেলিম উল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রকৃত আসামি যেহেতু নিজের নাম ঠিকানা আড়লে রেখে আমার মক্কেলের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেছেন সেক্ষেত্রে সাজা পরোয়ানামূলে পুলিশ আমার মক্কেলকে খুঁজছেন। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি আমার মক্কেলের এক প্রতিবেশী গ্রেপ্তার হয়ে কঙবাজার কারাগারে যান। সেখানে জোহর আলমও ছিলেন। জোহর আলমের কাছ থেকেই ওই প্রতিবেশী পুরো ঘটনা জানতে পেরেছেন।
প্রসঙ্গত, টেকনাফ থানার অপর একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রকৃত আসামি জোহর আলম বর্তমানে কঙবাজার কারাগারে রয়েছেন।