সীমান্তে উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশকে যেভাবে বিব্রত করছে; তাতে মিয়ানমার নিজেরাই ধরা পড়বে বলে মনে করছে ঢাকা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও বেশি কূটনৈতিক তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। আগামী দিনে যাতে এই ধারাটি আরও বেগবান করা যায়, সে রকম চেষ্টা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখতে বলা হয়েছে সংশ্নিষ্টদের।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে হওয়া উচ্চ পর্যায়ের এক বিশেষ বৈঠকে মিয়ানমার ইস্যুতে এমন মূল্যায়ন উঠে এসেছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভূখে বারবার মর্টারের গোলাসহ বিভিন্ন ধরনের উস্কানির প্রেক্ষাপটে অনির্ধারিত এ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা ছাড়াও বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার এই সময়ে এমন আচরণ করতে পারে- সরকারের কাছে এ মূল্যায়ন আগে থেকেই ছিল। এমন দাবি করে সংশ্নিষ্ট সূত্রটি জানায়, মিয়ানমারের কোনো ধরনের উস্কানিতে যাতে বাংলাদেশ পা না দেয়, তা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনেক আগেই সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে সতর্ক করে রাখা হয়েছিল। গতকালের বৈঠকে সেটা আবার নতুন করে বলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সংশ্নিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দেশসহ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে মিয়ানমারের উস্কানিমূলক আচরণের বিষয়টি বেশি বেশি করে তুলে ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে একঘরে অবস্থায় ফেলা যায়।
বৈঠকের মূল্যায়নে উঠে এসেছে, মিয়ানমার নিজ দেশের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এই যুদ্ধ বাংলাদেশ সীমান্ত ছাড়াও একাধিক জায়গায় বিভিন্ন সময়ে করতে হচ্ছে। দিন দিন মিয়ানমারের এমন অবস্থায় তার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে। আর এসব কারণে মিয়ানমার নিজ দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে আরও সমালোচনার মধ্যে পড়বে। ফলে দেশটি এই সমস্যার দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে বাংলাদেশকে জড়াতে চাইতে পারে। এতে তাদের দুই দিক থেকে সুবিধা। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের বিষয়টি চাপা পড়বে; দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঝুলিয়ে রাখা যাবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশকে এগোতে হবে। তাই কোনো উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, বিজিবিসহ সংশ্নিষ্ট সব পক্ষকে সীমান্ত পরিস্থিতিতে তীক্ষষ্ট নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে আর কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের উগ্র আচরণের বিপরীতে মাথা গরম করে যাতে কোনো পাল্টা জবাব না দেওয়া হয়- তা কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
ফলো করুন-
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সেনাবাহিনীসহ সবাই সবসময় প্রস্তুত। এখনও তাঁরা প্রস্তুত আছেন। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি; কাউকে পরোয়া করি না। কিন্তু আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। আমরা সেটা বজায় রাখতে চাই। আমরা কখনোই যুদ্ধকে উৎসাহিত করি না। যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিও আমাদের এখানে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। সেই যুদ্ধে গোলাবারুদ সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের দেশে এসে পড়ছে। এতে আমাদের জনগণ আতঙ্কিত হয়ে- কী ঘটছে! সে জন্য আজকে (বুধবার) আমরা সভাটি করেছি।
পাঠকের মতামত