ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁয়। তিনি শহরের আরজি নওগাঁ মহল্লার সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে।
সাইদুজ্জামানের সহকর্মীর বরাত দিয়ে তার স্ত্রী মান্না তাহরিন জানিয়েছেন, মুক্তিপণ না দিলে সবাইকে হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে জলদস্যুরা। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। রাত ১০টার দিকে সাইদুজ্জামানের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। তারপর থেকেই পরিবারের সদস্যরা উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।
সাইদুজ্জামানের জিম্মিদশার খবর পেয়ে স্বজনরা বুক চাপড়ে কাঁদছেন আর বিলাপ করছেন। তিনি যেন সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারেন সেই দোয়া করছেন তারা। গত বছরের ২০ নভেম্বর বাড়ি থেকে কর্মস্থলে গিয়েছিলেন সাইদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে সাইদুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা আবদুল কাইয়ুমের সঙ্গে। নওগাঁর জাহাঙ্গীরপুর সরকারি কলেজের সাবেক এ অধ্যক্ষ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছেলে এর আগে কয়েকটি জাহাজে দায়িত্ব পালন করেছে। তবে কখনো এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়নি। এই প্রথম দস্যুদের কবলে পড়তে হয়েছে।’
বাংলাদেশি নাবিকদের উদ্ধারের চেষ্টা, গুলি বিনিময়-
তিনি বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর থেকে পরিবারের কেউ ঘুমাতে পারিনি। সবশেষ মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ভালো আছে বলে জানায়। জাহাজটি দস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে তাদের কাউকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি বলে জানিয়েছে।’
মা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘সবাই যেন সুস্থভাবে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে আসে সেই দোয়া করি। তাদের ফিরে আসতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।’
পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সাইদুজ্জামান তার স্ত্রী মান্না তাহরিনকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বলেন, ‘আমাদের জাহাজে অ্যাটাক হইছে। জাহাজ জিম্মি করে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের সবাইকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের মারধর করেনি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত ভালো আছি, দোয়া কইরো।’
মান্না তাহরিন বলেন, ‘বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় স্বামীর এক সহকর্মী ভয়েস মেসেজ দিয়েছিল। মেসেজে জানানো হয়, তারা সবাই সুস্থ আছেন। সবাই সেহেরি খেয়ে একটি কক্ষে ঘুমিয়ে আছেন। তাদের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। যতদ্রুত মুক্তিপণ দেওয়া হবে ততদ্রুত তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। মুক্তিপণ দেওয়া না হলে একে একে হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হবে। ঘটনার পর থেকে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। কী করবো বা বলবো ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
জানা যায়, জাহাজটি গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই জাহাজটির দখলে নেয় জলদস্যুরা। সুুত্র: জাগোনিউজ
পাঠকের মতামত