নাইপেদো: মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বলেছেন, মুসলিমরা কেন চলে যাচ্ছে সেটি খুঁজে বের করার জন্য তিনি তাদের সাথে কথা বলতে চান। এছাড়া রাখাইনে সহিংসতার জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত ২৫ আগস্ট নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর জাতির উদ্দেশ্যে এটাই ছিল সু চি’র প্রথম ভাষণ। সু চি তার ভাষণে সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছেন।
সু চি’র এ ভাষণ নিয়ে বিশ্ব নেতাদের মাঝে প্রবল আগ্রহ ছিল। ময়ানমারের নেত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণে ভীত নন। রাখাইন অঞ্চলে সংঘাতের নিরসনের জন্য একটি টেকসই সমাধানের উপর জোর দেন সু চি।
টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে- এ ধরনের খবর শুনে আমরা উদ্বিগ্ন।’ কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিব বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ হবে মিজ সু চি’র জন্য শেষ সুযোগ।
কিন্তু এ ‘শেষ সুযোগ’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে সেটি ব্যাখ্যা করেননি জাতিসংঘের মহাসচিব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মায়ানমারের সেনাবাহিনীর উপর অস্ত্র বিক্রিসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সু চি’র এ ভাষণে নতুন কিছু আসে কি না সেদিকে অনেকের নজর ছিল। বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস কয়েকদিন আগে বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের চাবিকাঠি অং সান সু চি’র হাতেই রয়েছে। সেজন্য মিজ সু চি-কে তার পুরনো ভূমিকায় ফিরে যেতে হবে।
অধ্যাপক ইউনুস বলেন, সু চি তার পুরনো ভূমিকায় ফিরে যাবেন, নাকি বর্তমানে যে ভূমিকা পালন করছেন সেটি চালিয়ে যাবেন, সে সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হবে। গত তিন সপ্তাহে মায়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে পালিয়ে প্রায় চার লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
এই ভাষণের মাধ্যমে চলমান সংকটের সমাধান আনার জন্যে চাপ সু চি’র উপর চাপ তৈরি হয়েছিল বিশ্বজুড়ে।
এদিকে, সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে অং সান সু চিকে নিজের নেতৃত্ব প্রমাণের আহ্বান জানিয়েছিল ফ্রান্স ও ব্রিটেন।
অগাস্ট মাসের ২৫ তারিখে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সে হামলার জন্য রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপকে দায়ী করে দেশটির সরকার।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মায়ানমারের সেনাবাহিনী যেভাবে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সেটিকে ‘জাতিগত নির্মূলের’ সাথে তুলনা করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘে চলমান সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেননি সু চি। তিনি বলেছিলেন, অধিবেশনে যোগ না দিয়ে মায়ানমারে ভাষণ দেবেন।
কয়েকদিন আগে মায়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল মিন অং হাইং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য মায়ানমারের ভেতরে সবাইকে আহবান জানিয়েছেন। সেনাবাহিনী মনে করে, রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গারা একটি শক্ত ঘাটি গড়ে তুলতে চাইছে। যদিও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়না। সেনাবাহিনী এবং সরকার রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালী’ মনে করে।
শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা এ কথাও বলেছিলেন যে রোহিঙ্গারা কখনোই মায়ানমারের জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
সূত্র: বিবিসি।
পাঠকের মতামত