সেলিম উদ্দীন,ঈদগাঁও::
কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের ইকো ট্রি অ্যাডভেঞ্চারে দিনদিন আকৃষ্ট হচ্ছে নৈসর্গ প্রকৃতি প্রেমীরা।
চারিদিকে সবুজের সমারোহ। সাথে ইকো অ্যাডভেঞ্চারের নানা আইটেম। সত্যি মনোমুগ্ধকর। এখানে না এলে বুঝাই যাবেনা এই চকরিয়ায় লুকিয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরুপ দৃশ্য।
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক লাগোয়া উপজেলার খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে দেশের প্রথম ইকো অ্যাডভেঞ্চার করা হয়েছে। মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে ইকো ট্যুরিজমে পর্যটকদের জন্য ট্রি-এ্যাডভেঞ্চার ঝুলন্ত, ক্যাম্পিং ও হেমক নির্মাণ করা হয়েছে। নীরবে নিরাপত্তায় বন্যপ্রণী দেখার পাশাপাশি ইকো অ্যাডভেঞ্চারের নানা ব্যতিক্রমী আইটেম গড়ে তোলা হয়েছে ইতিমধ্যে।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ৩৯৬ হেক্টর বনভূমিতে গড়ে তুলা হয়েছে ইকো ট্যুরিজম। এটি ইতোমধ্যে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এখানে অ্যাডভেঞ্চার করতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন মেছোবাঘ, হাতির পাল,বানর, উল্টোলেজ বানর,বনবিড়াল,খাটাশসহ শত প্রকারের বণ্যপ্রাণী,বনমোরগ, শুশুক, ইগল, সবুজ ঠোঁট ফিঙে, চিল,শ্যামাসহ দেড় শতাধিক প্রজাতির পাখি, গুইসাপ, হ্যাজা সাপসহ নানা প্রজাতির সাপ ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ। পর্যটক-দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী রাখা হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে পর্যটক-দর্শকদের নীরবতা পালন করতে হবে।
বনবিভাগ জানায়, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী ট্রি অ্যাডভেঞ্চারটি চালু হয়। গর্জন গাছের মধ্যভাগে রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কেন্দ্রের প্রবেশ ফি মাথাপিছু ১০ টাকা। আর ট্রি অ্যাডভেঞ্চারের ধাপসমুহ শেষ করতে জনপ্রতি ৫০ টাকা। রাতে ক্যাম্প করলে তাঁবুপ্রতি ভাড়া দিতে হয় ৩৫০ টাকা। এখানে তাঁবু আছে ১২টি। ২৪জন গাইড তাদের তদারকি করেন। পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা ফিতে চলে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীদের বেতন-ভাতা।
প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্রি অ্যাডভেঞ্চারটি চালু করে বেসরকারী সংস্থা ইউএসএআইডির নেকম-ক্রেল প্রকল্প।
এটি পরিচালনা করছেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন মেদাকচ্ছপিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি)। মেদাকচ্ছপিয়ার জাতীয় উদ্যানের কিছুটা অংশ নিয়ে এই অ্যাডভেঞ্চারটি গড়ে তুলা হয়েছে।
এখনে পর্যটক-দর্শনার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার। একদিকে বনের ভেতর বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ অন্যদিকে রোমাঞ্চকর ইকো অ্যাডভেঞ্চারে নিজেদের মাতিয়ে রাখতে পারবেন প্রকৃতি প্রেমী ভ্রমণকারীরা। যা বাংলাদেশে প্রথম।
ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এর ক্রেল দেশি-বিদেশী পর্যটক আর দর্শনার্থীদের জন্য প্রথম এই ইকো অ্যাডভেঞ্চার ব্যবস্থাপনা করেছে।
ইকো গাইড হামিদ জানান, এখানে নিয়মিত পর্যটকরা আসেন। তারা নিরভে-নিভৃতে উদ্যানের বিভিন্ন গাছ-গাছালি,পশু-পাখির সাথে মিতালীতে মেতে উঠেন। আবার অনেকে রাত্রিযাপন করে। পাশাপাশি তাঁবু ঘেরে বারবিকিউসহ নানা ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে ঘন বনে রাতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিই।
নেকমের সাইট অফিসার মো.আবদুল কাইয়ুম জানান, মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের অভয়ারণ্যে হচ্ছে এ ইকো অ্যাডভেঞ্চার। এখানে অ্যাডভেঞ্চার করতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীরা বিভিন্ন পশু-পাখিসহ নানা ধরনের ইভেন্ট দেখে আনন্দ উপভোগ করছেন। তবে বণ্যপ্রাণীদের স্বার্থে কিছু শর্ত পালন করতে হয় দর্শনার্থীদের।
বিশাল বনাঞ্চলে যেসব অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে এর মধ্যে ট্রি অ্যাডভেঞ্চার, সাইক্লিন, হ্রদে বোটিং, ফিশিং, টি হাউস, ইকো হাউস, তাঁবু জলসা, হেমগ, গাছে ঝোলা, ট্রেল হাইকিং, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার অন্যতম।
মেদাকচ্ছপিয়া বিট অফিসার জানান, রাতে বা দিনে গাছের মাছায় উঁচুস্থানে নিরাপদে বন্যপ্রাণি দেখা, রাতে গাছে রাত্রি যাপন, ঝুঁলে ঝুঁলে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যাওয়া, গাছের দোলনায় গা দুলিয়ে দেয়াসহ প্রকৃতির কুলে বিশ্রাম নেওয়ার অনন্য সুযোগ রয়েছে। পর্যটক-দর্শনাথীদের জন্য রয়েছে ইকোট্যুর গাইড এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এটি বাংলাদেশের বৃহৎ মাদারট্রি গর্জন বাগান। উঁচু-নিচু পাহাড়, সমতল এলাকা নিয়ে ৩৯৫.৯৩ হেক্টর বনভূমিতে মাদারট্রি গর্জন ছাড়াও ডুমুর, বহেড়া, অর্জুন, বাঁশঝাড়, বেত, বাদাম, ছাতিমসহ নানা প্রকারের গাছ রয়েছে। যা পর্যটকদের ভ্রমণে আকৃষ্ট করবে।