কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর সৈকতের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার পাহাড়ি খাল দখল করে পোতা হয় অসংখ্য খুঁটি। রোববার বিকেলে অভিযান চালিয়ে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়ছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে দরিয়ানগর সৈকতের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিক খাল ভরাট করে রেস্তোরাঁ তৈরির চেষ্টা চলছিল। গভীর রাতে খালের অর্ধেক দখল করে ৮১টি খুঁটি ও বালুভর্তি জিও টিউব দিয়ে বাঁধ দেয় একটি গোষ্ঠী। খবর পেয়ে আজ রোববার বিকেলে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খালে পুঁতে রাখা ৮১টি কংক্রিটের পিলার উচ্ছেদের পাশাপাশি খালে লম্বালম্বিভাবে দেওয়া জিও টিউবের বাঁধ অপসারণ করা হয়।
যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমীন সুলতানা, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মুসাইব ইবনে রহমান, বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন প্রমুখ। অভিযানে আনসার ব্যাটালিয়ন ও বিচের কর্মীরা অংশ নেন।
ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) দরিয়ানগর সৈকতের একটি খাল (ছড়া) দখল করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খালের পাশে পুঁতে রাখা ৮১টি কংক্রিটের খুঁটি উচ্ছেদ করা হয়। বেশ কিছু জিও টিউব বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে দখলদারদের কাউকে পাওয়া যায়নি। দখলদারদের তালিকা করে পরিবেশ আইনে মামলা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে সমুদ্রসৈকত, পূর্বে বন বিভাগের মালিকানাধীন দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি। পেছনে বিশাল পাহাড়। পাহাড়ের নিচে সমতল ভূমিতে বড়ছড়া, শুকনাছড়ি ও ধইল্যাছড়ি নামে তিনটি গ্রামে ৭৫০ পরিবারের অন্তত ৭ হাজার ভাসমান ও শ্রমজীবী মানুষ বসবাস করেন। এর মধ্যে বড়ছড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে জলবায়ু উদ্বাস্তু ৮০টি পরিবার বসবাস করে। বৃষ্টির সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি তিনটি গ্রামে পৃথক তিনটি ছড়া দিয়ে দরিয়ানগর খালে নেমে পড়ে। তারপর দরিয়ানগর সেতুর নিচ দিয়ে ওই পানি বঙ্গোপসাগরে যায়। সেতু নিচের অংশে খালের প্রস্থ ১২০ ফুটের মতো। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ফুট তীর দখল করে খুঁটি পুঁতে রাখায় পানি চলাচলের গতিপথ সংকুচিত হয়ে যায়।
বড়ছড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সহসভাপতি আমির হোসেন বলেন, রাত ১২টার দিকে গাড়িতে করে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক খালের পানিতে কংক্রিটের খুঁটি পোঁতা শুরু করেন। গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকেরা ৮১টি খুঁটি পুঁতে খালের অর্ধেকের বেশি অংশ দখল করে সেখানে বালুভর্তি জিও টিউব বাঁধ দেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে জানালে তিনি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করেন।
দরিয়ানগর সমাজ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, গভীর রাতে জিয়া উদ্দিন নামের একজন প্রভাবশালী খাল দখলের জন্য শ্রমিক নিয়োগ দেন বলে জানা গেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা খালটি দখল বা ভরাট হলে এলাকা বিলীনের পাশাপাশি হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেরিন ড্রাইভও ভেঙে যেতে পারে।