বিশ্বের উন্নত দেশের আদলে এবার কক্সবাজারে ভ্রমনরত পর্যটকরা দ্বিতল ছাদখোলা বাসে চড়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে নির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে চলবে ৩টি ট্যুরিস্ট বাস। যেখানে পর্যটকরা ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে পুরোদিন মেরিনড্রাইভ সড়ক হয়ে ৬টি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।
সেই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইয়ামিন হোসেন এবং বিআরটিসির পক্ষে কক্সবাজার ইউনিট প্রধান মো: আজিজুল হক এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এসময় বিআরটিসির পরিচালক ড. অনুপম সাহা, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বিআরটিসির পরিচালক ড. অনুপম সাহা বলেন, ‘বিআরটিসির লাল-সবুজের বাহন আজ এক অনন্য উচ্চতায়। আমরা বিভিন্ন জেলায় এই নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। এই প্রয়াসের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়কে ট্যুরিস্ট বাস চালু করা হচ্ছে। এর আগেই আমরা টাউন সার্ভিস শুরু করে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে আমরা যখন বাস ডিপো চালু করতে পারব তখন এই জেলার সাথে অন্যান্য জেলার আন্ত:নগর সংযোগ বৃদ্ধি পাবে। যে ট্যুরিস্ট বাস এখানে চলবে তা নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় হবে। আমি আশা করি, এখানে এই রাষ্ট্রীয় সম্পদটির সর্বোত্তম ব্যবহার হবে। অচিরে এখানে আরও বাস যুক্ত করা সম্ভব হবে। ‘
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইয়ামিন হোসেন জানান, পর্যটকদের জন্য প্রতিদিন প্রথম ট্রিপে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে বাস ছাড়বে সকাল ৯ টায়। আর দ্বিতীয় ট্রিপে ছাড়বে সকাল সাড়ে ১০টায়। লাবনী পয়েন্ট থেকে ৭৫ আসনের একটি বাস যাত্রীদের উখিয়ার রেজু সেতু পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এরপর যাত্রীরা অটোরিকশায় চড়ে সেতু পার হয়ে উঠবে ওপারে অপেক্ষমাণ বাসে। সেখান থেকে বাস যাবে টেকনাফের সাবরাংয়ের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত। রেজু সেতুর ওপার থেকে টেকনাফগামী দুই বাসের একেকটির যাত্রী ধারন ক্ষমতা ৫৯ জন। প্রায় ৯ ঘন্টার ভ্রমনপথের বিরতিতে যাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে খাবার খাবেন। আর ট্যুরিস্ট বাসগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে জেলা প্রশাসন।
তিনি জানান, দ্বিতল বাসের আপার ডেকে (ছাদখোলা অংশে) জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৭০০ টাকা। আর নিচতলায় জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৬০০ টাকা করে।
বর্তমানে পর্যটকরা মেরিন ড্রাইভ সড়কের পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমন করেন জিপ, সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইকে চড়ে। ছাদ খোলা বাসগুলো যুক্ত হলে পর্যটকরা অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পর্যটন স্পটগুলো ঘুরতে পারবেন বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘এই বাস সার্ভিস চালু হলে পর্যটকরা মেরিন ড্রাইভ সড়কের সমুদ্র-পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে আরও বেশি মুগ্ধ হবেন। এটি নি:সন্দেহে কক্সবাজারের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বাড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের কথা চিন্তা করে এ বাসগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। এ বাস চালুর ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। ডালপালা কাটার ক্ষেত্রে আমাদের প্রায় এক মাস সময় ব্যয় করতে হয়েছে। যাওয়ার পথে যাত্রীদের রেজুখালের এপারে একবার নামতে হবে। আবার ওই পারে গিয়ে অন্য বাস উঠতে হবে। তারপরও পর্যটকদের সুবিধার্থে আমরা এই সেবাটি চালু করতে চাই। এজন্য সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা যৌক্তিক পর্যায়ে ভাড়া নির্ধারণ করেছি।
পাঠকের মতামত