ডাচ রেফারি ড্যানি ম্যাকিলির বাঁশি শুনে লিওনেল মেসির বুক থেকে নিশ্চয়ই মস্ত একটা ভার নেমে গেল! পেনাল্টি মিসের যে বেদনা দীর্ঘক্ষণ কষ্ট দিচ্ছিল হঠাৎ সেগুলি হয়ে গেল ফুলের মালা।
মেসি আবারো বিশ্বকাপমঞ্চে পেনাল্টি মিস করেছেন। এর চেয়ে বড় খবর হলো, কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে গেছে তার দল আর্জেন্টিনা। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ আলবিসেলেস্তেদরা মাঠে নেমেছিল পোল্যান্ডের বিপক্ষে। পেনাল্টি থেকে গোলের সূবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারায় মেসির দল প্রথমার্ধের খেলা গোলশূন্য শেষ করে।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ভিন্ন চেহারায় মাঠে নেমে পোলিশদের জালে একাধিক গোল দেয়। ২-০ গোলে জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আর্জেন্টিনা গেল রাউন্ট অব সিক্সটিনে। দলের হয়ে একটি করে গোল করেছেন ম্যাক অ্যালিস্টার ও জুলিয়ান আলভারেস। পরের রাউন্ডে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া।
২০২২ সালে আর্জেন্টিনা সবশেষ গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল। পরের আসর থেকে মেসি নিয়মিত খেলছেন বিশ্বকাপ মঞ্চে। আজ বিশ্বকাপের ২২তম ম্যাচে মাঠে নেমে কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার ২১ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ভেঙে নিজেকে শীর্ষে নিয়েছেন। এমন ম্যাচে মেসি যদি দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলতে না পারে তাহলে কষ্টের শেষ থাকবে না।
তাইতো রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে জয় নিশ্চিতের পর মেসিকে পাওয়া গেল অন্য চেহারায়। সতীর্থদের সঙ্গে জয় উদযাপন শেষে সমর্থকদের সঙ্গে মিশে গিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। তার উদযাপনই বলে দিচ্ছিল, প্রবল চাপে থাকা নাবিকের তীরে গিয়ে তরি ভেড়ানোর আনন্দ কতোটুকু। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে শেষ দুই ম্যাচে জিততেই হতো এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নামা প্রবল চাপের।
সেই চাপ মাঠের ফুটবলে মেসি বুঝতে না দিলে পেনাল্টিতে বোঝা গেছে স্পষ্ট। আবার ম্যাচের আগে পোলিশ গোলরক্ষক সেজিসনি মেসিকে রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেই চাপ যেন পাহাড়সম করে দেন। তাতে সেজেসনি ফুরফুরে থাকলেও মেসি পারেননি। নিজের বামদিকে ঝাঁপিয়ে পেনাল্টি রুখে দিয়ে নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন জুভেন্টাসে খেলা এ গোলরক্ষক।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে তাকে ডিঙিয়েই দুই গোল পায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে ৪৭ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন ম্যাক অ্যালিস্টার। ডানপ্রান্ত থেকে মোলিনার ক্রস থেকে আলতো পা ছুঁয়ে লক্ষ্যভেদ করেন অ্যালিস্টার। দেশের জার্সিতে এটি তার প্রথম গোল। এরপর ব্যবধান দ্বিগুন করেন জুলিয়ান আলভারেস। ৬৭ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজের বাড়ানো পাস দারুণ দক্ষতায় এক টাচে রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে কোনাকুনি শট নেন আলভারেস।
গোটা ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২৪টি অন টার্গেটে শট নিয়েছে। যার ২০টিই ফিরে এসেছে। সেজিসনির কথা আলাদাভাবে বলতেই হবে। ১১ শটের ৯টিই ৩২ বছর বয়সী গোলরক্ষক একা ফিরিয়েছেন। এক মেসিরই শট ঠেকিয়েছেন চারটি।
জয় নিশ্চিতের সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে পোল্যান্ডকে অপেক্ষায় থাকতে হয়। আরেক মাঠে মেক্সিকো ও সৌদি আরবের ম্যাচ তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। ওই ম্যাচে ২-১ গোলে মেক্সিকো জয় পাওয়ায় পোল্যান্ডের কপাল খুলেছে। ফেয়ার প্লে ও গোল হিসেবে তারা উঠে গেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে।
প্রি কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। পোল্যান্ড খেলবে ফ্রান্সের বিপক্ষে।