ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। আসন্ন এই ঝড়ে সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শনিবার (১৩ মে) বিকেলে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন এই আশঙ্কার কথা।
এই গবেষক জানান, বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টার সময় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল রান থেকে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় মোখার স্থলভাগে আঘাতের স্থান দেখা যাচ্ছে ছবিতে। এই পথেই ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আঘাতের সম্ভাবনা ৯৯%। এই পথ অনুসারে দেখা যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের পুরোটা কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন হওয়ার শঙ্কায়। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে বন্যা, ভূমিধস ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-কাঠামোর স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছি। সেন্টমার্টীন দ্বীপে আটকেপড়া মানুষদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়ে যাবে যদি সকল মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা না হয়; কমপক্ষে ২য় তলা বিল্ডিং ও তার উপরের স্থাপনায়।
এদিকে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি আজ শনিবার (১৩ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার (১৪ মে) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ (১৩ মে) রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আরও জানান, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ আট নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে
পাঠকের মতামত