বাংলাদেশে আজ পালিত হল মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আর এই ঈদ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হল ঈদ শুভেচ্ছা জানানো। আগে সাধারণত মানুষ প্রিয়জন বা বন্ধুদের সাথে দেখা করে বা কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাতো। কিন্তু এখন সেটি দখল করে নিচ্ছে ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা ।
অর্থাৎ এসএমএস, ই-মেইল বা ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টেক্সট, অডিও বা ভিডিও আকারে শুভেচ্ছা পাঠানো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রমশ। অবশ্য গ্রামের চেয়ে শহরেই এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ বনাম সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ
ঢাকার গ্রীন রোড এলাকার একটি বাড়িতে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে মিরপুর থেকে এসেছেন এক দম্পতি। সেখানে নিজেদের পারিবারিক আড্ডাতেও ঘুরে-ফিরে উঠে আসছিল এখনকার দিনে ঈদ উদযাপন এবং ঈদের আনন্দ নিয়ে কথাবার্তা।
হাউজওয়াইফ শামীম আরা চৌধুরী মুনমুন বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আমি ঈদের দিন বান্ধবীদের সাথে বন্ধদের বা আত্মীয় -স্বজনদের বাসায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি। এখনও আমি আমার ছেলেকে নিয়ে সেভাবেই ঘুরতে চাই। কারণ চাই যে সে বুঝুক ঈদ মানে বিশেষ একটি দিন। এখনকার ছেলেমেয়েরা তো ঈদের দিন ঘুমিয়ে আর ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করে দিন শেষ করে। আর বলে ঈদে মজা শেষ”।
মিসেস মুনমুন যেমন ঈদে সশরীরে দেখা করে স্বজনদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজের কথা বলছিলেন, একইসময় তার বর বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহফুজুর রহমান বলেন, সামাজিকভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং ভার্চুয়াল মাধ্যম -দুটোকে ঘিরেই সম্পর্ক রক্ষা চলছে ।
“ঈদের ছুটিতে আমরা চেষ্টা করি সবার সাথে দেখা করতে। কিন্তু ব্যস্ততা, সময় সব মিলিয়ে হয়তো হয়ে ওঠেনা। সেক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। আবার হয়তো বহু বছর দেখা নেই এমন মানুষদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে। আমাদের কলিগরা অনেকেই ঢাকার বাইরে। সেক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগটা অনেক সহজ করে দিচ্ছে”।
তাদের সাথে যখন আলাপ হচ্ছিল তেমন সময় অন্য ঘরে বাচ্চারা সময় কাটাচ্ছে। টেলিভিশন চলছে। কিন্তু সেদিকে কারও নজর নেই। কেউ খেলছে আর কেউ ব্যস্ত মোবাইলে ইউটিউব কিংবা গেমস নিয়ে।
বিনে পয়সায় শুভেচ্ছা জানাতে পারছেন ব্যবহারকারীরা
মোবাইল-ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার কিংবা ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ- এ একটার পর একটা শুভেচ্ছা বার্তা আদানপ্রদান চলে ঈদ বা অন্যান্য উৎসবে।
আর ঈদকে ঘিরে এই শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজ ধীরে ধীরে বাড়ছে।
উঠতি তরুণ শাহরিয়ার বলেন, ঈদের দিনে বা উৎসবে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ তারা মূলত সোশ্যাল মিডিয়াতেই করেছেন।
আবার বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানি নামমাত্র মূলে হাজার হাজার এসএমএস পাঠিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর অফার দিচ্ছে ।
আন্তরিকতায় ঘাটতি?
একটা সময় বিভিন্নরকম কার্ডের মাধ্যমে যেভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় হতো সে রেওয়াজটি তরুণদের মধ্যে অনেকটা উঠে গেছে। আবার একই মেসেজ বা বার্তা গণহারে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জনের কাছে।
ফলে আন্তরিকতার বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে কি-না সেই সেই প্রসঙ্গটি তোলেন বেসরকারি একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহানা ইয়াসমিন ।
সোহানা বলেন, ‘ছোটবেলায় নিজেরাই ঈদ-কার্ড বা পোস্টকার্ডে শুভেচ্ছা জানাতাম। এখন দেখা যায় ফেসবুকে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছি। কেউ রিপ্লাই দিল কি-না সেটাও দেখা হয় অনেক পরে। কিন্তু সেখানে তো কার্ডের মত সেই আন্তরিকতা থাকে না”।
সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগের সাইটগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফেসবুক। বৈশ্বিক এক জরিপে জানা যায়, শুধুমাত্র ফেসবুক ব্যবহারকারী দুইকোটি ২০ লাখ। টুইটার হোয়াটস অ্যাপ ভাইবার সহ অন্যান্য সব মাধ্যম মিলে এ সংখ্যা আরও অনেক।
রাজধানী বা মেট্রোপলিটন সিটিতে সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রীক বিচরণ বেশি হলেও ছোট শহরগুলোতে তা তুলনামূলক অনেক কম। তবে মোবাইল গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়ার ফলে এবং নিত্য-নতুন স্মার্ট-ফোন কেন্দ্রিক বাণিজ্যের ফলে এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। ফলে ঈদকে ঘিরে শুভেচ্ছা জানাতে অনেক পাবলিক ফিগার বা জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বরা বেছে নিচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমকে।
অনেকেই বলছেন, বর্তমান বিশ্ব ও সময়- দুটোর সাথে তাল মেলাতেই হয়তো ঘুরেফিরে সামাজিক মাধ্যমে আসছেন । ফলে এ নিয়ে বিতর্ক বা আবেগ যাই থাকুক না কেন এর ব্যবহার যে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে বড় শহর থেকে মফস্বলের গলিতে -তাতে অস্বীকার করার উপায় নেই ।
পাঠকের মতামত