গ্রামীণফোন রবি বাংলালিংকের অভিযোগ

মোবাইল ইন্টারনেট সরকারই বন্ধ রেখেছে

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৬/০৭/২০২৪ ৯:৪৪ পিএম
Networking

টানা ৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার রাত থেকে সচল হয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিলেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং ডিজিটাল নির্ভর খাতগুলোতে। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অভিযোগ ব্রডব্যান্ড নামে যে সেবা চালু করা হয়েছে এটি মূলত ন্যারো ব্যান্ড। তারা বলছেন, সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা চালু করার কথা সরকার ও আইএসপি’র (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) পক্ষ থেকে বলা হলেও এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন না তারা। আবার যেসব এলাকায় চালু করা হয়েছে তা অত্যন্ত ধীরগতির। এটি দিয়ে প্রয়োজনীয় কোন কাজই করা সম্ভব হচ্ছে না। কোথাও কোথাও একটি ই-মেইলও পাঠাতে পারছেন না অনেকে। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে এই তথ্য সঠিক নয়। যাও পাওয়া গেছে তা ন্যারো ব্যান্ড এটিকে কোনভাবেই ব্রডব্যান্ড বলা যাবে না।

Play Video
Close PlayerUnibots.com
এদিকে ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে গুগলের ক্যাশ সার্ভার চালুর জন্য আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে বর্তমানে ফেসবুক ও টিকটকের ক্যাশ সার্ভার বন্ধ রয়েছে। তবে ইউটিউব চলবে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকদিন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসি, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) এবং ট্রান্সমিশন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তিনি বসবেন। সেখানে সঞ্চালন লাইন মেরামতের সবশেষ পরিস্থিতি এবং সার্ভার ও ডেটা সেন্টারের সাথে সংযুক্তি কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী রোববার বা সোমবারের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পুনস্থাপনের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন প্রতিমন্ত্রী।

তবে মোবাইল ফোন ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী, বিটিআরসি যে বক্তব্য দিচ্ছে তা বিশ্বাস করছেন না সাধারণ গ্রাহকরা। তাদের বিশ্বাস সরকার মোবাইল ফোন ইন্টারনেট নিয়ে যেসব বক্তব্য দিচ্ছে তা অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য এবং বানোয়াট। ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো যে বক্তব্য দিয়েছে তাতেও ফুটে উঠেছে ভিন্ন চিত্র। বেসরকারি তিন মোবাইল ফোন অপারেটরের অভিযোগ দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। এবিষয়ে ডাক, তথ্য ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা রয়েছে।

গ্রামীণফোন এক বিবৃতিতে জানায়, দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যেই মিডিয়াতে তার বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছি।

মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন গাজী তৌহিদ আহমেদ বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে মিডিয়াতে তার বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। এই বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষণি যোগাযোগ রেখে চলেছি।

অপর অপারেটর রবির পক্ষ থেকে বলা হয়, জরুরি পরিষেবা হিসেবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখার বিষয়টি কখনোই অপারেটরদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। এবিষয়ে ডাক, তথ্য ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা রয়েছে।
অপারেটরটি আরো জানায়, মালেয়েশিয়াভিক্তিক আজিয়াটা গ্রæপ বারহাদ এবং এদেশের সাধারণ জনগণের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রবি আজিয়াটা লিমিটে ইন্টারনেটসহ সকল ডিজিটাল পরিষেবা সর্বক্ষেত্রে চলমান রাখার ব্যাপারে সচেতন।

এদিকে ইতোমধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হলেও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের আইন ও সরকারের নির্দেশনা না মানায় বন্ধই থাকবে ফেসবুক। সরকারের নির্দেশনা মানবে এমন নিশ্চয়তা পেলেই কেবল ফেসবুক চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

প্রতিমন্ত্রী ফেসবুক চালু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন আসলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ফেসবুক এদেশে ব্যবসা করে, এখান থেকে অর্থ উপার্জন করে। কিন্ত এদেশের সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুভ‚তির বিষয়গুলো কখনোই আমলে নেয় না। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের আইনকানুন মেনে, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভ‚তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে সেইসব দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামাজিক যোগাযোগের এ ধরনের মাধ্যমে বিনিয়োগের আহŸান জানান।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ফেসবুক যদি এই সহিংসতার সময় খোলা থাকতো, তাহলে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সহিংসতা আরও তীব্র আকার ধারণ করতো। প্রতিমন্ত্রী ফেসবুককে চিঠি দেওয়া হবে উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে আমরা অফিসিয়ালি চিঠি দেবো। সহিংসতা প্রতিরোধে তাদের কাছ থেকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চাইবো। এরপর এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মারার ভিডিও যদি ফেসবুকে আপলোড করা হতো, তাহলে এ নিয়ে সহিংসতা আরও তীব্রতর হতে পারতো। ফেসবুককে এসব বিষয় বুঝতে হবে।

তবে সরকার ফেসবুক বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেও গত দুইদিন ধরেই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর নামে ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে প্রতিনিয়ত তার কার্যক্রম প্রচার করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রতিমন্ত্রী ফেসবুক, ইউটিউব বন্ধ করতে এতো যুদ্ধ ঘোষণা করলেন অথচ তিনি এই দুই মাধ্যমেই দুদিন ধরে পোস্ট করছেন। আর বিপাকে পড়েছেন দেশের সব মানুষ। এ কেমন আচরণ?

পাঠকের মতামত