মোবাইল কোম্পানিগুলো কোনো নির্দেশনা না মানায় দেশের ১৩ কোটি গ্রাহক ছয়টি মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা তলানিতে এসে ঠেকেছে। হরিলুটের মতো করে টাকা কেটে নিচ্ছে। কিভাবে টাকা কাটা হচ্ছে তার হিসেবও দিচ্ছে না তারা। কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় দিনের পর দিন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সাধারণ মানুষ ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিকার চাইলেও কোনো ব্যবস্থা হয় না। অনেক গ্রাহক প্রতারিত হয়ে কার কাছে যাবে তাও বুঝতে পারে না। অরাজকতা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে এ নিয়ে আন্দোলনে নামার কথাও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসছে। অনেকের প্রশ্ন- মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ক্ষমতার উৎস কোথায়?
অনেক গ্রাহক তাদের ‘নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া’ কোম্পানি বলেও আখ্যায়িত করছেন। তাদের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসে তখন তারা সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন চালিয়ে অর্থ লোপাট করে নিয়ে যেত এবং সমাজের মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠীকে তারা বিশেষ সুবিধা দিত। এখনও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো একইভাবে মানুষের পকেট কেটে টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এখনও কিছু মুষ্টিমেয় লোক ‘নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া’র কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছে।
দেশের ছয়টি ফোন কোম্পানির মধ্যে ৫টি বেসরকারি ও একটি রাষ্ট্রীয়। বেসরকারিগুলো হলো গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল ও সিটিসেল। আর রাষ্ট্রীয় কোম্পানি টেলিটক। এর মধ্যে রবি ও এয়ারটেল সম্প্রতি একীভূত হয়েছে। সিটিসেলের অপারেশন নেই বললেই চলে। ১৯৮৯ সালে সিটিসেল এশিয়ায় প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণফোন। এরপর আসে অন্য অপারেটরগুলো। এই যাত্রার পর থেকে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
একজন গ্রাহক বলেন, কয়েকদিন আগে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির ধানমন্ডি কাস্টমার সেন্টারে তিনি ফোন করেছিলেন। নেটওয়ার্ক ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ জানান তিনি। জবাবে কাস্টমার সেন্টার থেকে তাকে জানানো হয়, এই এলাকায় আমাদের টাওয়ারের যে ধারণক্ষমতা তার চেয়ে অনেক বেশি গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তাই ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা উপর মহলে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিয়তই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কাছে। কোনো নির্দেশনাই তারা মানে না। এ নিয়ে বিটিআরসি থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও জবাব আসে না।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসির চেয়েও উপর মহলে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে। তাহলে বিটিআরসির নির্দেশনা কেন মানতে হবে? তারা সরকারকে সর্বোচ্চ ট্যাক্স দেয়। সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন তাদের উল্টো তোষামোদ করে চলে। ফলে তারা এই ধরনের নির্দেশনা মানতে বাধ্য নয়।
সূত্র: ইত্তেফাক