মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটররা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তাদের এজেন্ট বা বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান অপরাধ করছে। সন্দেহজনক লেনদেন বা ই-মানি ট্রানজেকশন অপরাধের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরগুলোকে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
রোববার (৩০ জুন) দুপুরে সিআইডি সদর দপ্তরে ‘সাবমিশন অব রিসার্চ রিপোর্ট অন চ্যালেঞ্জ অব কন্ট্রোলিং ইলিগ্যাল মানি ট্রান্সফার থ্রো মোবাইল অ্যাপস: এ স্টাডি অন অনলাইন গ্যাম্বলিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিআইডিপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে পাচারসহ অর্থনৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট ডাটা নেই।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানি লন্ডারিংয়ের ডাটা আছে। আমাদের এখন জরুরি একটি কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার; বিশেষ করে ফিন্যান্সিয়াল সাইটের, যেখানে সিআইডির প্রবেশাধিকার থাকবে।
‘আমরা দেখছি বিকাশ, নগদ, রকেট বা উপায় যেটাই হোক, এরা কিন্তু সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এজেন্ট প্রতিষ্ঠান অপরাধ করছে। সন্দেহজনক লেনদেন বা ই-মানি ট্রাকজেকশন অপরাধের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরগুলোকে আইনের আওতায় আনা উচিত’, বলেন তিনি।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, নিয়মিত যেসব মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে লেনদেন হচ্ছে, বিশেষ করে সন্দেহজনক লেনদেনের ক্ষেত্রে সেখানে নজরদারি রাখতেও দরকার সিআইডির অ্যাকসেস। বাংলাদেশে যেসব এমএফএস, অর্থাৎ বিকাশ, নগদ, রকেটসহ মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি। বিকাশ, নগদ, রকেট—যাদের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।
‘আমরা সিআইডি এখন এ জায়গায় হাত দিয়েছি। আমরা এজেন্টদের সোর্স অব ইনকাম, কেন বেশি টাকা ই-মানি করতে চাইছে? এটা কি বৈধ না অবৈধ আয়ের টাকা? এটা কি তারই না অন্য কারও বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? কারণ বৈদেশিক রেমিট্যান্স ব্লক করে দিয়ে বাংলাদেশি টাকা বাংলাদেশেই সার্কুলার করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। বেশ কিছু মামলাও হয়েছে। ’
সিআইডিপ্রধান বলেন, যেসব তথ্য আমরা পাচ্ছি তা বেশ কষ্টকর যে, আমাদের প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার/রিঙ্গিত/রিয়েল) বাংলাদেশে ঢুকছে না। এগুলো দুবাইসহ অন্য সব দেশে থেকে যাচ্ছে। সেখানকার নির্দেশনা মোতাবেক এজেন্টগুলো বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে টাকা নিয়ে বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে নগদ, বিকাশ, রকেট বা উপায়কে দিয়ে ই-মানি করে বিতরণ করা হচ্ছে। এই জায়গায় হাত দেবার পর আমরা দেখছি ইতোপূর্বে এসব প্রতিষ্ঠান আনটাচ ছিল। সঙ্গত কারণে তারা অনেক অপরাধ করে বেড়িয়েছে। আমাদের কার্যক্রমের পর আস্তে আস্তে কমছে।
তিনি বলেন, আমাদের ডাটাবেইজ সিস্টেম উন্নত করা দরকার। যেহেতু এখনো এটা উন্নত করা এখনো হয়নি, সেজন্য তথ্য-উপাত্ত দরকার। আমরা কিন্তু তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বেশ কিছু চমৎকার অভিযান চালিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, আমাদের ক্রিমিনাল ডাটাবেইজ নাই। সন্দেহজনক লেনদেন ধরারও আমাদের কোনো অ্যাকসেস নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্যাশ বোর্ডে যদি আমাদের লোক থাকে তাহলে আমরা সন্দেহজনক লেনদেন দেখলেই দ্রুত ব্যবস্থা বা অপারেশন করতে পারি। কিন্ত বিএফআইইউ সেটা করতে পারে না৷ তারা তথ্য পেলে সিআইডিকে জানায়, তারপর কার্যক্রম। এজন্য সিআইডির এইসব জায়গায় অ্যাকসেস থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে৷
সিআইডি অ্যাকসেস পাওয়ার চেষ্টা করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি হবে। না হলে ফিন্যান্সিয়াল অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পাঠকের মতামত