বিকাশসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ব্যংকিংয়ের কারণে হুন্ডি বাড়ছে বলে এক গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা প্রতিবেদনটি শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমিক ইন ২০১৬-১৭’শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান।
রেমিট্যান্সের প্রবাহ সাম্প্রতিক সময়ে নেতিবাচক দিকে আছে উল্লেখ করে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অথচ আমাদের বিদেশে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি এখন ভালো। একদিকে প্রবাসী কর্মসংস্থান বাড়ছে, কিন্তু সেটার সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আলোচনায় আমাদের দুটো হাইপোথিসিস আছে- একটা হলো রেমিট্যান্স হয়তো আসছে, কিন্তু আমাদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে না এসে ইনফরমাল চ্যানেল হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। দ্বিতীয়টি হলো, মধ্যপ্রাচ্যের যে বড় বাজার সেখানকার অর্থনীতি নেতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে।’
মালয়েশিয়ার এসইমিম হাউসগুলোর বরাত দিযে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া থেকে বৈধ পথে টাকা পাঠানো প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পেছনে বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিং একটা কারণ বলে মনে করেন সিপিডির এই অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক। তিনি বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংকে কাজে লাগিয়ে হুন্ডি অনেক ক্ষেত্রে বাড়ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা এটা ছড়িয়ে দিচ্ছে। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।’ এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিং তো অ্যালাউই নয়।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিং দেশে ‘ইলেকট্রনিক হুন্ডি’নামে পরিচিত। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বিকাশই প্রধান হাতিয়ার এই ইলেকট্রনিক হুন্ডির।
দেশের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা তুলে দেয় দেশের উদ্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিকাশের মিডিয়া ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ দেশে যখন টাকাটা আসে তখন হয়তো আগে যেখানে তারা ঘরে গিয়ে টাকা দিয়ে আসত, এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মধ্যমে পাঠাচ্ছে। এটাকে তো অবৈধ বলা যায় না, কারণ এটা লোকালি হচ্ছে। আর মোবাইল ব্যাংকিং শুধু বিকাশই করে না, আরো অনেক প্রতিষ্ঠান করে। তাই আমি শুধু বিকাশ না বলে মোবাইল ব্যাংকিং বলব।’
বিকাশের মিডিয়া ম্যানেজার বলেন, ‘বিদেশ থেকে সরাসরি বিকাশের মাধ্যমে টাকা আসে না। আমাদের বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর মাধ্যম হলো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন। এখানে মাস্টার কার্ড নেটওয়ার্ক দিচ্ছে। তাই বিদেশে থেকে সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আসার সুযোগ নেই।’
সম্প্রতি ‘বিকাশ’-এর মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসছে বলে অভিযোগ করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।সেখানে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ সিঙ্গাপুর, কোরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে ব্যাপকভাবে ‘বিকাশ’-এর মাধ্যমেও দেশে অর্থ প্রেরণ করা হয়। এভাবে প্রেরিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর প্রান্তিকে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ৪২৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছর একই সময়ে যা ছিল ৫০৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
পাঠকের মতামত