উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
ঘূর্ণিঝড় মোড়ার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি মেরামত করতে সরকার সহযোগিতা করতে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এরই মধ্যে প্রশাসন তালিকা করতে উদ্যোগ নেয়া নিয়েছে।
বুধবার সকালে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, বাড়িঘর নির্মাণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি তাদের হাতে নগদ টাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও সরকার করেছে।
মঙ্গলবার সকালে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানে। এই ঝড়টি আঘাত হানার আগেই এ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০ নম্বর মহা বিপদসংকেতও দিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ঝড়টি দুর্বল হয়ে যায় এবং তা আঘাত হাতে ভাটার সময়। তাই যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তারপরও কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিনসে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গাছপালা পড়ে বাড়িঘর ভেঙেছে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে কেবল কক্সবাজারেই ২০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহর রহমত করেছেন। যে পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল, ঝড়টা সরে যাওয়াতে আর ওই সময় যেহেতু সাগরে ভাটা ছিল, সেজন্য ক্ষতি অতটা হয়নি। তবে প্রচুর ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, গাছপালা নষ্ট হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
‘ঘূর্ণিঝড়ে অনেক মানুষ গৃহহারা হয়ে গেছে, অনেক ঘর ভেঙে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে আমরা তালিকা বানাচ্ছি, প্রত্যেকে যাতে ঘরবাড়ি বাড়াতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। খাদ্য এবং তাদের হাতে নগদ টাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি’-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ত্রাণ বিতরণে আওয়ামী লীগের কমিটি
ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়। সেখান থেকে দেশে ফেরেন তিনি বুধবার সকালে। আর গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে নির্দেশনা দেন। গঠন করা হয় কয়েকটি কমিটি। কমিটিগুলো আজকের মধ্যেই উপদ্রুত এলাকায় যাবে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্লেন থেকে নেমে এসেই আমাদের পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরকে আমি নির্দেশ দেই। আমাদের কয়েকটি টিম ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। তারা খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে। দুর্গত অঞ্চলে গিয়ে তারা দাঁড়াবে, মানুষের সমস্যা কী তা জানবে। একদিনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে, প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও যেমন আমরা সহযোগিতা করব, তেমনি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও টিম আমরা ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছি। যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়ে গেছে। তারা হয়ত আজকের মধ্যেই অনেকেই চলে যাবে দুর্গত এলাকায়।’
৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি ছিল না
এ সময় সংসদে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারি ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সে সময়কার বিএনপি সরকারের প্রস্তুতিহীনতার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘২৯ এপ্রিল তখন ঝড়টা হয়। সে সময়ে বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। এমনকি যে ঝড় আসছে, সে বিষয়ে কোনো ঘোষণাও ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কত মানুষ তখন মারা যায়, সরকার সে খবরই রাখেনি। এমনকি আমি পার্লামেন্টে যখন এ কথাটা তুললাম, তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চট করে উঠে বললেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল, তত মানুষ মরেনাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কত মানুষ মরলে আপনার তত মানুষ হবে, আপনি বলুন।’