মোহাম্মদ আলি। বিশ্ব বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা। জন্মলগ্ন থেকে তিনি এ পরিচয়ে বেড়ে ওঠেননি। ১৭ জানুয়ারি ১৯৪২ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তখন তার নাম ছিল ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে। বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড পেইন্টার ক্যাসিয়াস সিনিয়র ও গৃহিনী ওডেসা দম্পতির প্রথম ছেলে ছিলেন তিনি।
কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে বিশ্ববিখ্যাত বক্সার হওয়া সত্ত্বেও তিনি বর্ণবৈষম্যের শিকার হন। বসতে দেয়া হয়নি শ্বেতাঙ্গদের হোটেলে, দেয়া হয়নি খাবার। সবকিছু মিলিয়ে এক সময় ক্যাসিয়াস জুনিয়র যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা ও শ্বেতাঙ্গদের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। খুঁজতে থাকেন এ বৈষম্য থেকে মুক্তির পথ।
১৯৬৪ সালের কথা। এলিজা মোহাম্মদ ও ম্যালকম এক্সের নেতৃত্বাধীন ‘নেশন অব ইসলাম’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে পরিচয়ে সূত্র ধরেই ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি জানতে পারেন ইসলামে নেই কোনো বর্ণ-বৈষম্যের ভেদাভেদ। এক সময় ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। নাম ধারণ করেন ‘মোহাম্মদ আলী’।
ইসলাম গ্রহণের পর জানতে পারেন ‘নেশন অব ইসলাম’ যদিও ইসলাম নামটি ধারণ করেছেন, তথাপিও তারা শুধুমাত্র ইসলাম নিয়েই কাজ করেন না বরং তারা আরেক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যেখানে ইসলাম এবং খ্রিস্টান ধর্মকে সম্বন্বয় করে আরেক ধর্মমত প্রতিষ্ঠায় নিমগ্ন তারা।
অবশেষে ১৯৭৫ সনে তিনি ‘নেশন অব ইসলাম’-এর সংস্পর্শ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন করে সুন্নী মুসলিম হিসিবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। শুরু করেন পুরোপুরি ধর্মীয় জীবন-যাপন। এরপর থেকেই নিজেকে প্রকৃত মুসলিম দাবি করেন।
তাঁর দেখাদেখি তাঁরই ছোট ভাই রুডলফও ‘রহমান আলী’ নাম ধারণ করে মুসলিম হয়ে যান। তাঁর মেয়ে লায়লা আলীও পরবর্তীতে বাপের পেশায় সুনাম অর্জন করেন।
ঐ সময় তিনি বলতেন, ‘আমাকে যদি ‘ইসলাম এবং বক্সিং’ এ দুটোর মধ্য থেকে কোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয়; তবে আমি ইসলামকেই বেছে নেবো। তিনি আমৃত্যু মানুষের মাঝে সাম্য প্রতিষ্ঠা ও ভেদাভেদ নির্মূলে শান্তির লক্ষ্যে কাজ করেগেছেন।
৭৪ বছর বয়সী এ বিশ্ব বিখ্যাত বক্সার ২০০৫ সাল থেকে জীবনের বাকি সময় তিনি সুফিবাদ চর্চা করে কাটিয়েছিলেন।
বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম বক্সার মোহাম্মদ আলি শুক্রবার শেষ রাতের দিকে অ্যারিজোনার ফোনিক্স এরিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তাঁর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। কামনা করি তাঁর রূহের মাগফিরাত। আল্লাহ তাআলা তাঁকে পরকালের উত্তম জীবন দান করুন। আমিন।