উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
স্বপ্নেভরা দু’চোখে সময়ের কান্না ছিল তাদের। লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে এসেছিলো রাজশাহী কলেজে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য। পরীক্ষায় বসতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতির কমতি ছিল না। কিন্তু যানজটে পড়ে তাদের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল।
তারা সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হতে পারেননি। বগুড়া অঞ্চলের এই ১৫০ শিক্ষার্থীর অনেকেরই এবার ছিলো বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার শেষ সুযোগ। তাই মুছে গেলো তাদের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন।
শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় তাদের কেন্দ্র ছিলো রাজশাহী কলেজ। পরীক্ষাও নির্ধারিত সময়েই আরম্ভ হয়েছে। কিন্তু সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় কর্তৃপক্ষ তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরেই ঢুকতে দেয়নি। এ সময় পরীক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। তবুও পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ মেলেনি।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী কলেজের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়ার দাবিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেক পরীক্ষার্থী স্লোগান দিচ্ছেন। কেউ কেউ গেট খুলে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছেন পুলিশকে। আবার কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন হতাশায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এক কথা, সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়মের বাইরে গিয়ে তাদের পরীক্ষায় বসতে দেয়া হবে না।
বগুড়া থেকে রাজশাহী কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থী শিলা খাতুন জানান, নাটোর-বগুড়া সড়কের রণবাঘা নামক স্থানে একটি ট্রাক উল্টে সড়ক বন্ধ করে দিয়েছিলো। এতে সড়কের দুই পাশে দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। এই যানজটে আটকে পড়ে বগুড়া থেকে রাজশাহী আসা বাসগুলো। আটকে পড়েন পরীক্ষার্থীরাও।
পরে সড়ক থেকে ট্রাক সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে আসতে কয়েক মিনিট দেরি হয়ে যায়। তাই তাদের ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রের অন্তত ১৫০ জন বিসিএস পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলেন না। তিনি যে বাসে এসেছেন সে বাসেই অন্তত ৩০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন বলে জানান শিলা খাতুন।
কান্নায় ভেঙে পড়ে বগুড়ার পরীক্ষার্থী আফসানা আফরিন বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। উৎকোচ দিয়ে চাকরি নেয়ার সামর্থ্য নেই। তাই অনেক কষ্ট করে ভালোভাবে পড়াশোনা করেছিলেন। প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বিসিএস পরীক্ষার। ভেবেছিলেন- বিসিএস ক্যাডার হয়ে দুঃখ ঘুচাবেন বাবা-মায়ের। কিন্তু যানজটে আটকে গেলো তার সেই রঙিন স্বপ্ন।
আরেক পরীক্ষার্থী জুবায়ের হাসান বলেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি বগুড়া থেকে রওনা হন। তার বাসেও ৫২ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। কয়েক মিনিট দেরি হওয়ায় তারাও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। তাদের অনেকেরই ছিলো এবার পরীক্ষা দেয়ার শেষ সুযোগ।
কেন্দ্র সচিব রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান বলেন, পরীক্ষা দিতে হলে সকাল ১০টার মধ্যে অন্তত কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকতে হবে। এটাই নিয়ম। কিছু পরীক্ষার্থী এই সময়ের মধ্যে আসতে না পারায় তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন তিন হাজার ৭৫০ জন। এর মধ্যে প্রায় ২০০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলে। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরা একে একে কলেজের প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকেন। তখনও পরীক্ষার জন্য অপেক্ষায় যানজটে আটকে পড়া পরীক্ষার্থীরা। এক সময় বের হতে থাকা পরীক্ষার্থীদের ভিড় বাড়ে। এই ভিড়ের মাঝেই হারিয়ে যান পরীক্ষা দিতে না পারা পরীক্ষার্থীরাও। হারিয়ে যায় তাদের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নও। যাদের এবারই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার শেষ সুযোগ ছিল তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারেই ডুবে গেল।