আব্দুল আলীম নোবেল:
১৯৭১ সাল ২৫ মার্চ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে এটিএম জাফর আলম ইকবাল হলে (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ৩০৩ নাম্বার কক্ষে পাক সেনাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
মায়ের প্রাণের ধন প্রথম সন্তানকে স্বাধীনতা যুদ্ধে হারালেও জীবন যুদ্ধে থেমে থাকেননি শহীদ জননী আলমাছ খাতুন। তার স্কুল মাস্টার স্বামীকে হারিয়েছেন ১৮জুলাই ১৯৬৭সালে। বহু চুড়াঁয় উত্তরায় পার করে জীবন সংগ্রামের সফলতা আর বিফলতার গল্পকে পেছনে রেখে বর্তমানে প্রায় ৯০ বছরে পা রেখেছে রত্নগর্ভা এই মা। অন্যরকম এক মা তিনি। হাসি মাখা মুখ। চোখে মুখে মমতার ছাপ। পরিশ্রমি এই মানুষটি নিপুন হাতে তিল তিলি করে গড়ে তুলেছেন তার এই সংসার। ছেলে মেয়ে সবাইকে সু-শিক্ষায় গড়ে তুলেছেন। নিজের চোখে সন্তানদের সফলতা দেখতে পেরে উপর ওয়ালার কাছে বার বার শুকুরিয়া আদায় করছেন তিনি। কক্সবাজার টেকনাফ সড়কটি তার সন্তান শহীদ এটিএম জাফর আলমের নামে শহীদ এটিএম জাফর আলম সড়ক নামকরণ করায় তিনি অনেক বেশি খুশি।
কক্সবাজার উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের চাকবৈটা এলাকার বাসিন্দা মরহুম আসরাফ আলী সিদারের মেয়ে আলমাছ খাতুন। তাহার মায়ের নাম জমিলা খাতুন। সেই সময় সিকদার বাড়ি মেয়ে প্রাইমারি পর্যন্ত পড়ালেখা করার সুযোগ হয়েছিল। তৎকালিন সময়ে গ্রামের মেয়েরা প্রাইমারি পর্যন্ত পড়ালেখা করা অনেক কঠিন ব্যাপার ছিল। নিজে বেশি পড়া লেখা করতে না পারলেও বিয়ে হয় একই এলাকার হলদিয়াপালং রুমখা এলাকার বাসিন্দা মাষ্টার ছৈয়দ হোসনের সাথে। মরহুম ছৈয়দ হোসেন সমম্ভ্রান্ত মাতবর পরিবারের সন্তান। এলাকায় মাষ্টার ছৈয়দ হোসনের বেশ সুনাম রয়েছেন। সমাজ সেবা ও শিক্ষায় অবদানও কম নয় তার।
সাহসী এই শহীদ জননী আলমাছ খাতুন, থেমে থাকেনি ছেলে মেয়েদের পড়া করাতে। তাহার প্রত্যক সন্তানরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত। ৯ সন্তানের যে যার অবস্থান থেকে সাবই এখন প্রতিষ্ঠিত। এক ছেলে নাম শফিউল আলম। বর্তমানে তিনি মন্ত্রপরিষদ সচিব। প্রশাসনের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা এই মানুষটি সৎতা আর কর্মদক্ষতায় তিনি আজ এত উচুমানে। আলমাছ খাতুনের আরেক ছেলে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে লেখা পড়া শেষ করেছেন। নাম শাহ আলম। (অধ্যক্ষ শাহ আলম) ।
তিনি উখিয়া উপজেলাধিন হলদিয়া পালংএর বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তাহার অপর ছেলেরা প্রবাসী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাহার এক মাত্র মেয়ে ব্যাংকার স্বামীকে নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। বয়সের বারে নুয়ে পড়লেও এই শহীদ জননী এখনও খবর রাখেন দেশ ও পরিবারের। প্রতিবেদকের একান্ত আলাপচারিতায় অকপটে বললেন তার সে ফেলে আসা অতীত জীবনের কথা।
২০১৩সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় তরফ থেকে সফল জননী জয়তা পুষ্কারও পেয়েছেন শহীদ জননী আলমাছ খাতুন।