হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
রামুর গর্জনিয়ার আলোচিত যুবলীগ নেতা মঞ্জুর আলম হত্যাকা-ের এক বছর পার হলেও ন্যায় বিচার পায়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। তাঁরা বলেন, মামলার অভিযোগপত্রও আদালতে পৌঁছেনি। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। এই পর্যন্ত স্বেচ্ছায় কোন আসামিকে আটক করেনি পুলিশ। কিন্তু আত্মসমর্পণ করতে গেলে এই মামলায় গত বছরের চার আগষ্ট উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলার প্রধান আসামি শিবিরের সাবেক ক্যাডার ও গর্জনিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান নজরুলকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। তাঁকে হাজতবাস করতে হয়েছে তিনমাস। বর্তমানে উল্টো বাদি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিপক্ষে গিয়ে, আসামিদের পক্ষ অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ ধরণের অভিযোগ এনে গতকাল সোমবার (২১ আগস্ট) বেলা একটায় মামলার বাদি ও নিহত মঞ্জুরের স্ত্রী সলিমা খাতুন- নিহত ব্যক্তির মৃত্যুকালীন এবং পূর্বের আহত অবস্থায় জবানবন্দির ওডিও সিডি, মেমোরি কার্ড দাখিল এবং এসব তথ্য উপাত্তের আলোকে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য- কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-১ এ তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদেশ দানের আবেদন জানিয়েছেন। আর আদালতের বিচারক রাজিব কুমার দেব বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
বাদি পক্ষের সিনিয়র আইনজীবি আবদুল মান্নান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- বিজ্ঞ বিচারক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরাবরে নির্দেশনাটি অতি দ্রুত পাঠিয়ে দিবেন।
আবেদনে বাদি সলিমা খাতুন উল্লেখ করেছেন- আসামিগণ ঘটনার সময় স্বামী মঞ্জুর আলমকে গুরুত্বর জখম করলে, তাঁর অবস্থা মুমর্ষ হওয়ায় তৎক্ষনাৎ শত শত মানুষ জড়ো হয়। এসময় সবার সামনে তিনি আসামিগণ তাঁকে গুরুত্বর জখম করেছে বলে জানান। তাঁর গলায় নৌকার কার্ড ঝুলানো ছিল বলে নজরুল চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁকে আঘাত করেছে এবং নিজের মোবাইলটি চিনিয়ে নেন বলে নিশ্চিত করেন। যা মামলার ৩ নম্বর স্বাক্ষীসহ অনেকেই মুঠোফোনে রেকর্ড করে নেন। এসব তথ্য উপাত্ত তদন্ত কর্মকর্তাকে দিতে চাইলেও তিনি অজ্ঞাত কারনে নিতে অপরগতা প্রকাশ করে চলেছেন।
মামলার প্রধান আসামির বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, নারী নির্যাতন এবং অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলা থাকায় এক শ্রেণির দুর্ণীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে পূর্ব থেকেই তার গভীর সংখ্যতা তৈরী হয়। যার সূত্র ধরে বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইতোপূর্বে মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুস সালাম আসামিদের বিরুদ্ধে কোন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ না করে বাদিকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। বিষয়টি সিআইডি চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশ সুপারকে অবগত করলে- তিনি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে, আবদুস সালামকে পরিবর্তন পূর্বক বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মিজানকে তদন্তভার দেন। কিন্তু তিনিও পূর্ব তদন্তকারী কর্মকর্তার ন্যায় আচরণ আরম্ভ করলে-মামলার বাদি ন্যায় বিচার পাবার আশায় আদালতের স্বরণাপন্ন হয়েছেন।
বাদি সলিমা খাতুন বলেন, 'গত বছর গর্জনিয়ার নির্বাচনের আগের দিন ২৭মে রাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম তাঁর লোকজন নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরীকে হত্যা করতে গেছে এমন খবর মাইকে প্রচার হতে থাকলে আমি ও আমার স্বামী ঘর থেকে বের হয়ে আসি। স্কুলমুড়া থেকে চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে যাওয়া মাত্রই আমরা হামলাকারীদের সামনে পড়ে যাই। তখন তারা মঞ্জুরুলের গলায় নৌকার কার্ড ঝুলানো দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে লোহার রড় ও লাঠি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করতে থাকেন।
বিশেষ করে নজরুল, আবদুল মাজেদ সিকদার, মোজাফ্ফর, জয়নাল আবেদিন সিকদার নির্যাতন চালায় মধ্যযুগীয় কায়দায়। এক পর্যায়ে গ্রামের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় স্বামীকে (মঞ্জুর) উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেই তিনি ২৯মে মারা যান।
প্রভাবশালী আসামিদের বিরুদ্ধে রামু থানায় মামলা না নেওয়ায়, ২০১৬ সনের ৫জুন সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন সলিমা। পরে আসামিগণের গ্রেপ্তারের দাবিতে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।