আল্লাহর অনুগ্রহ মুমিনের জীবনে পরম আরাধ্য। সহজে মহান আল্লাহর অনুকম্পা লাভের উপায় হলো— সৃষ্টিজগতের প্রতি দয়ার্দ্র আচরণ করা। তাদের প্রতি সর্বদা অনুগ্রহ করা। কেননা, সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা ও অনুগ্রহ মহান স্রষ্টা আল্লাহর ভালোবাসা ও অনুগ্রহ ত্বরান্বিত করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত ইহসানকারীদের (অনুগ্রহশীল) নিকটবর্তী।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)
জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০১৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) অপর হাদিসে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা দয়ালুদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনে যারা বসবাস করছে তাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)
উল্লিখিত হাদিস দুইটির আলোকে মুহাদ্দিসরা বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না। বিপরীতে যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন।
জীব-জন্তুর ও পশু-পাখির প্রতি অনুগ্রহ
মানুষের অনুগ্রহ লাভের যোগ্য কেবল মানুষই নয়, বরং বন্য ও গৃহপালিত প্রাণী এবং পশু-পাখি সব। তাদের প্রতিও দয়াশীল আচরণ করতে হবে।
একাধিক হাদিসে এসেছে, একজন দেহপসারিণী বিড়ালকে পানি পান করিয়ে ক্ষমা লাভ করে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে। অন্যদিকে এক নারীকে শুধু এই কারণে শাস্তি দেওয়া হবে যে, সে একটি বিড়াল বেঁধে রেখেছিল। বিড়ালটিকে খাবার, দানাপানি দেয়নি। আবার তাকে ছেড়েও দেয়নি যে— জমিন থেকে কুড়িয়ে খাবার খাবে; ফলে বিড়ালটি এ অবস্থায় মারা যায়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৬৫)
স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে সৃষ্টির প্রতি দয়া নয়
মহান আল্লাহ তাআলা তার সৃষ্টির প্রতি দয়া করতে বলেছেন। তাদের অনুগ্রহ ও মায়ায় আবদ্ধ করতে বলেছেন। তবে তা অবশ্যই আল্লাহর আনুগত্যের শর্তাধীন হতে হবে। আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কারো প্রতি ভালোবাসা ও অনুগ্রহ প্রকাশ শরিয়তসম্মত নয়।
এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘চোখ অশ্রু ঝরায়, হৃদয় শোকার্ত হয়, তবে আমরা শুধু তা-ই বলব যাতে আমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হয়। হে ইবরাহিম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩০৩)
অন্য এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্রষ্টার অবাধ্যতা হয় এমন কোনো ক্ষেত্রে সৃষ্টির অনুসরণ করা যাবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৩৪০; মুসলিম, হাদিস : ১৮৪০; আবু দাউদ, হাদিস : ২৬২৫)
পাঠকের মতামত