ঢাকা: নিজের ৭২তম জন্মদিনে কেক না কেটে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে চলে আসা বিতর্কের আপাত অবসান ঘটিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন-তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত- এই তিন বছর কঠিন সময় পার করেছে বাংলাদেশ। বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জন্য এই তিন বছর ছিল আরো কঠিন।
তারা বলছেন- ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া একটি রায়ের প্রেক্ষিতে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ‘ফাঁসির’ দাবিতে শাহবাগে গণজাগারণ মঞ্চ গড়ে উঠলে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিরোধিতা এবং হেফাজতে ইসলামের ‘সহিংস’ কর্মসূচিতে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। সে অবস্থার মধ্যেও জাতীয় শোক দিবসের দিন ঘটা করে নিজের ৬৯ তম জন্মদিন পালন করেন তিনি।
এর পর ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলনের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার ওই ‘ব্যর্থ’ আন্দোলনে প্রায় পৌনে ২শ’ লোক প্রাণ হারান। এদের অধিকাংশই পেট্রোল বোমার শিকার হন। দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে তার বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নিজের ৭০তম জন্মদিন পালন করেন খালেদা জিয়া।
এদিকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে গিয়ে পুলিশি বাধার শিকার হন তিনি। এর পর অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে টানা ৯২ দিন নিজ কার্যালয়ে অবস্থান করেন। পেট্রোলবোমায় নিহত হন প্রায় দেড় শতাধিক সাধারণ মানুষ।
এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যু হয়। এতো সব ঘটনাও খালেদা জিয়াকে জন্মদিন পালন থেকে বিরত রাখতে পারেনি। দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে কেক কাটেন তিনি। হঠাৎ এমন কী ঘটল-দুই যুগ পর এসে ১৫ আগস্ট শোকের দিন কেক কেটে জন্মদিন উৎসব পালন বন্ধ করলেন খালেদা জিয়া?
গত দুই দিন বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত ইতিবাচক রাজনীতির কথাই চিন্তা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। জাতীয় ঐক্য’র ডাক দিয়ে জাতীয় শোক দিবসে নিজের জম্মদিন পালন করতে চান নি তিনি। তাই আগে-ভাগেই দলের সব পর্যায়ের নেতাদের বলে দিয়েছেন, কেউ যেন কেক ও ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে না আসে।
গুলশানে জঙ্গি হামলার পর জাতীয় ঐক্য’র ডাক দেন খালেদা জিয়া। ওই ডাকে সাড়া দিয়ে গত ৪ আগস্ট গুলশানের বাসায় দেখা করতে আসেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। টানা দুই ঘণ্টার বৈঠকে খালেদা জিয়াকে যে প্রস্তাবগুলো তিনি দেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন না করা।
পরের দিন ৫ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছি। তার মধ্যে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে জন্মদিন পালন না করার প্রস্তাবও আছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন- খালেদা জিয়া আমার প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করেছেন কি না তা ১০ দিন পর বোঝা যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় ঐক্য’র প্রশ্নে খালেদা জিয়া হয়তো আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। এখন দেখার বিষয়, খালেদা জিয়ার ঐক্য’র ডাকে কাদের সিদ্দিকী সাড়া দেন কি না।
এ ছাড়া ২০ ও ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা অন্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদেরও দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল জাতীয় শোকের দিন যেন খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন না করেন।
তবে জন্মদিন পালন না করার পেছনে জাতীয় ঐক্য, জাতীয় শোক দিবস বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী’র বিষয়টিকে স্বীকার করছেন না বিএনপি নেতারা। তারা বলার চেষ্টা করছেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা, নেতার-কর্মীদের উপর নির্যাতন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলায় দেশের সংকটময় পরিস্থিতি মাথায় রেখে জন্মদিন পালন থেকে সরে এসেছেন খালেদা জিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, যে ধারা এবার শুরু হলো এটা অব্যাহত রাখবেন খালেদা জিয়া। আর কোনো দিন জাতীয় শোক দিবসে কেক কাটবেন না তিনি। তবে খালেদা জিয়ার এই শুভ বুদ্ধি ও শুভ চিন্তার বিষয়টি আওয়ামী লীগকেও মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টিকে যেন তারা দুর্বলতা হিসেবে না দেখে।