সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ‘নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’ এ মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স অফিস। একইসঙ্গে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ওই অফিসে তলব করা হয়েছে।
বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও সরকারের ট্যাক্সের ১৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করছে না ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি।
তিনটি পে অর্ডারের মাধ্যমে ট্যাক্স পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হলেও টাকার অভাবে তা ট্যাক্স অফিস (কর অঞ্চল- ১) নিতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ‘নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’ এ মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স অফিস। একই সঙ্গে আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের তলবও করা হয়েছে ওই অফিসে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলোচ্য আইনে মামলা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রদেয় তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে আসা এ সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপিতেও দেখা যায়, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)-সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট কর অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে। কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা বা জরিমানা করা হবে না— সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তাদেরকে তলব করেছে কর অফিস।
চিঠি পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করে আয়কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার মো. ফুৎফুল আজীম, টিবিএসকে বলেন, “ব্যাংকটির কাছে বকেয়া ট্যাক্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। তারা ১৫০ কোটি টাকার পে অর্ডার দিয়েছে, কিন্তু তা জমা হচ্ছে না তারল্য সংকটের কারণে। তাদেরকে একাধিকবার রিমাইন্ডার দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।”
“আমরা শুনেছি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন কতটুকু পেয়েছে, সেটাও বলছে না, আবার আমাদের অপরিশোধিত টাকাও দিচ্ছে না,” যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকের এমডির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিক বার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি টিবিএস।
বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা কয়েকটি ব্যাংকের মধ্যে একটি ছিল ইউনিয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে— যার কারণে এখন তারল্য সংকটে পড়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক। এ কারণেই এখন সরকারের ট্যাক্সের টাকা দিতে পারছে না বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি ২২,০০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অর্থসহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক— যার একটি অংশ ইউনিয়ন ব্যাংকও পেয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকটি সরকারের ট্যাক্সের টাকা শোধ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘অপরিশোধিত ট্যাক্স ডিডাকশন এট সোর্স (টিডিএস) এর অর্থ পরিশোধ না করায় নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় কেন আপনার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে না– তা আগামী ৩১ ডিসেম্বর তারিখে আপনি বা আপনার আইনগত প্রতিনিধি হাজির হয়ে ব্যাখ্যা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
একই সঙ্গে ওই অর্থ আদায় ও কেন জরিমানা আদায় করা হবে না– সে বিষয়েও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
‘শুনানিতে উপস্থিতির ব্যর্থতায় কিংবা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিতে পারলে উভয় ব্যবস্থাই, অর্থাৎ মামলা এবং জরিমানার ব্যবস্থা,’ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
প্রসঙ্গত, প্রতি মাসের ট্যাক্সের টাকা পরবর্তী মাসের দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধের বিধান রয়েছে।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই সরকারের আনুকূল্য পাওয়ায় এস আলমসহ কয়েকটি ব্যাংক-ব্যবসায়ী গ্রুপের অনিয়ম বের হয়ে আসতে শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিপাকে পড়ে এস আলম গ্রুপের দখল করা ব্যাংকগুলো— যার মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক ছাড়াও রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড। এর বাইরে পদ্মা ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকও খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
আলোচ্য ট্যাক্স অফিসে মোট ৭টি ব্যাংকসহ ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্সের অর্থ বকেয়া পড়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংক গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত কোনো টাকাই শোধ করতে পারেনি।
তবে লুৎফুল আজীম জানিয়েছেন, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক ইতোমধ্যে টাকা পরিশোধ করতে শুরু করেছে। বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ছাড়াও পদ্মা ও ন্যাশনাল ব্যাংক টাকা শোধ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা টিবিএসকে বলেন, “সব ব্যাংককেই ফান্ড দেওয়া হয়েছে। তাহলে ইউনিয়ন ব্যাংক কেন টাকা পরিশোধ করতে পারছে না, তা বলতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “তাদেরকে (ইউনিয়ন ব্যাংক) অনেকবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে ট্যাক্সের টাকা পরিশোধ করে দেয়।”
ট্যাক্সের পে অর্ডার ডিসঅনারের কারণে ‘নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’-এ এর আগে কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা। সেক্ষেত্রে আলোচ্য ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা হলে তা হবে দেশের ইতিহাসে ট্যাক্সের পে অর্ডার ডিসঅনারের কারণে কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে হওয়া প্রথম মামলা। সুত্র: টিবিএস
পাঠকের মতামত