পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চালানো অভিযানের বিষয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিষয়টিতে দেশটির সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বুঝাতে ঢাকায় বিশেষ দূত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে মিয়ানমার। এর আগে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় অষ্টম এফওসিতে প্রতিশ্রুত ২ হাজার ৪৯৫ জন মিয়ানমারের নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিয়ানমারের যেসব নাগরিক অবস্থান করছে, সে বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরা হবে।
প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমানে তিন লাখ রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। আর সম্প্রতি গণহত্যার ঘটনায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২ হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গা নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, এদের ২০১৭ সালের মধ্যেই ফিরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মিয়ানমার সরকারের। বিভিন্ন সময় মিয়ানমার থেকে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল এলাকায় বসবাস করছে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক কিয়াউ জায়া রয়টার্সকে বলেন, আমাদের তথ্যানুযায়ী সেখানে মাত্র ২ হাজার ৪১৫ মিয়ানমারের নাগরিক আছে। ২০১৭ সালে এ ২ হাজার ৪১৫ জনকে ফিরিয়ে নেয়ার একটি পরিকল্পনা মিয়ানমার সরকারের রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিন লাখ মিয়ানমারের নাগরিকের যে হিসাব দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তার ‘কোনো ধারণা’ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গণমাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, মিয়ানমার বাংলাদেশে অবস্থানরত ২ হাজার ৪১৫ জন নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছে। এদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি অষ্টম এফওসির মাধ্যমে সমাধান হয়।
তবে সে সময়ে দেশটির দাবি ছিল, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে এদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। এখন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের নাম প্রস্তাবের মাধ্যমে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে হবে। বিশেষ দূতের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে জানা যাবে, তারা কি আগের প্রস্তাবিত প্রক্রিয়ায়ই থাকবে, নাকি অন্য কোনো প্রস্তাব রয়েছে। ২০১৪ সালে এ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থীশিবিরে নিবন্ধিত ৩২ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এর বাইরে আরো প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে অবস্থান করছে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে যাচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তারা দেশের দুর্নামও বাড়াচ্ছে।কক্সবাংলা
পাঠকের মতামত