ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু : রমজান মাস আসছে। মুসলিমরা সুস্থ-অসুস্থ সব অবস্থাতেই রমজানের রোজা ব্রত পালনে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সুস্থ হলে তো রোজা রাখতে বাধা নেই; বরং গবেষণায় দেখা গেছে, এটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু অসুস্থ থাকলেও যে রোজা পালন করতে পারবেন না, তা নয়। তবে রোজা পালন করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
ডায়াবেটিসের রোগী
ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা রোজা রাখতে পারবেন। তবে যদি ইনসুলিনই হয় একমাত্র চিকিৎসা, তবে না রাখাই ভালো। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওষুধের মাত্রা কম লাগে। তাই বলে নিজে থেকে ওষুধ কমাবেন না। রোজা শুরুর আগেই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নিন।
পেপটিক আলসার রোগী
পেপটিক আলসারে আক্রান্তরা রোজা রাখতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করবে রোগের অবস্থার ওপর। যদি সমস্যা বেশি হয়, তাহলে রোজা পালন না করাই শ্রেয়। তবে রোজা যে পালন করতেই পারবেন না, তা-ও নয়। রোজা রেখে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পরিমিত খেলে বরং ওষুধ ছাড়াই ভালো থাকা সম্ভব। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, আমাদের দেশের প্রায় সবাই আলসারে আক্রান্ত। গ্যাস্ট্রিক নেই এমন লোক পাওয়া যাবে না। এটা কিন্তু ভুল। এটা আলসার নয়। খাদ্যাভ্যাসের ত্রুটির জন্য পেটে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, তা আসলে আলসার নয়। এমন গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোজা পালন করলে সুস্থ থাকবেন। যাদের আলসার মানে পেটে ঘা আছে, তারা রমজানের আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত নিন।
হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী
হৃদরোগী ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তরা রোজার মাধ্যমে বেশ উপকার পেতে পারেন। রোজার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হওয়ার ফলে যাঁরা হৃদরোগে অথবা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাঁদের জন্য রোজা অত্যন্ত উপকারী। এতে শরীরের, বিশেষ করে রক্তনালির চর্বি হ্রাস পায়, রক্তনালির এথেরোস্ক্লেরোসিস কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তার পরও রোজা শুরুর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করুন। কারণ, পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে এমন ওষুধ থাকলে তা পরিবর্তন করতে পারেন আপনার চিকিৎসক।
অ্যাজমায় আক্রান্ত রোগী
শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা রোগীদের রোজা রাখতে সমস্যা নেই; বরং এ রোগের প্রকোপ কমই থাকে। তবে শ্বাসকষ্ট যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, এ জন্য ওষুধ তো ব্যবহার করতে হবে। রাতে একবার বা দুবার ওষুধ খেয়ে নেবেন। এটি দীর্ঘক্ষণ শ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ধরনের ওষুধ বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিন। দিনের বেলায় প্রয়োজন পড়লে ইনহেলারজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায়।
কিডনির রোগী
কিডনির সমস্যায় যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের রোজা রাখতে সমস্যা নেই। তবে কোনো সিদ্ধান্ত চিকিৎসক ছাড়া নয়।
অনেককেই নিয়মিত তিনবেলা ওষুধ সেবন করতে হয়। তাঁদের ক্ষেত্রে ডোজ পরিবর্তন করা আবশ্যক। এ কাজটি করতে সহায়তা করবে আপনার চিকিৎসক।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।