এ মাসের বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ মাস আল্লাহ প্রদত্ত চারটি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুমের) একটি। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাস সম্পর্কে খুব গুরুত্ব দিতেন। ফলে রজবের চাঁদ দেখা গেলে তিনি কিছু বিশেষ আমল শুরু করতেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবী করিম (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাজান।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন।’ –আল মুজামুল আওসাত: ৩৯৩৯
সুতরাং এখন থেকে রমজান পর্যন্ত দোয়াটি খুব বেশি বেশি পড়া দরকার। আলেমরা বলেছেন, ‘আশহুরে হুরুমের বৈশিষ্ট্য হলো, এসব মাসে ইবাদত-বন্দেগির প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তওফিক হয়। আর আশহুরে হুরুমে কষ্ট করে গোনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্যান্য মাসেও গোনাহ পরিহার করা সহজ হয়।’ –আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ৩/১১১
বর্ণিত দোয়া ছাড়াও এ মাসে এই আমলগুলো করা যেতে পারে।
রজবের প্রথম রাতের দোয়া কবুল হয়
পবিত্র হাদিস শরিফে রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ এসেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহতায়ালা ফিরিয়ে দেন না, অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন। রাতগুলো হলো- জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭৯২৭
রজব মাসের রোজা
রজব মাসে রোজা রাখার ভিন্ন কোনো ফজিলত নেই। তবে হ্যাঁ, এমনিতেই নফল রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল। মুহাদ্দিস হাকেম ইবনে হাজার (রহ.) লিখেছেন, বিশেষভাবে রজব মাসে রোজার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ ও আমলযোগ্য কোনো হাদিস নেই। -তাবইনুল আজার বিমা ওরাদা ফি ফজলি রজব: ১১
ইসলামি শরিয়তে রোজা রাখার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ দিনগুলো ছাড়া যেকোনো দিনই নফল রোজা রাখা যায়। এর অনেক ফজিলত রয়েছে। তবে রজবের বিশেষ রোজা হিসেবে ফজিলতপূর্ণ মনে করে রোজা রাখা সুন্নত নয়। বিশেষত, রজবের রোজাকে সুন্নত ও মুস্তাহাব মনে করে নফল রোজা রাখা ঠিক নয়।
সমাজের প্রচলন আছে, ২৭ রজবে রোজা রাখা অনেক ফজিলত। এমনকি অনেকের মধ্যে এ বিশ্বাস রয়েছে যে এই একটি রোজার ফজিলত এক হাজার রোজার সমান। এ জন্য তাকে হাজারি রোজা বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এ রোজার ব্যাপারে সহিহ ও গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা নেই।
রজব মাসে খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর মাজারে তার ওফাত উপলক্ষে যে ‘উরস’ হয় সেখানে এমন অনেক পশু জবাই করা হয় যা মূর্খ লোকেরা হজরত খাজা (রহ.) বা তার মাজারের নামে মান্নত করে থাকে। এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারও নামে মান্নত করা, তা যদি পীর-বুজুর্গের নামেও হয়- তবুও তা শিরক।
আজমিরের ওরসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে লাল কাপড়ে মোড়ানো বিরাট ‘আজমিরি ডেগ’, ‘খাজার ডেগ’ আবার কোথাও কোথাও মাজারের আদলে অস্থায়ী মাজার স্থাপন করা হয়। পরে আজমির এর উদ্দেশ্যে মান্নত কিংবা প্রয়োজন পূরণের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, চাল-ডাল ইত্যাদি ওঠানো হয়। যা দেওয়াও হারাম এবং ওখান থেকে কিছু খাওয়াও হারাম। যারা এগুলো উঠায় তারা এগুলো দিয়ে আনন্দ-ফূর্তির আয়োজন করে। ঢোল-তবলা ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নাচ-গানের আসর বসায়, নাচ-গানসহ নানা ধরনের গর্হিত কাজ করে, যা নিঃসন্দেহে হারাম।