দুইদিন পার হলেও এখনো উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রিয়াজুল হক রিয়াজের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি, উঠছে নানা প্রশ্ন।
বুধবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের মোহাম্মদ আলী ভিটার নিজ বাড়ী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সুরতহাল শেষে রাতেই নিয়ে আসা হয় উখিয়া থানায়, তিন ঘন্টা পর পরিবারের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হলে পরদিন সকালে (বৃহস্পতিবার) জানাযার পর উখিয়া কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁর দাফন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন বিকেলে রিয়াজের ঘর ভেতর থেকে বদ্ধ ছিলো। বাহির থেকে ডাক দিয়ে সাড়া না পাওয়ায় ঘরের ছাউনী ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে স্থানীয় এক কিশোর।
দরজা খোলার পর স্বজনরা গলায় গামছা ঝুলানো রিয়াজের মরদেহ দেখতে পায়।
উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল, উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হোসাইন ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্বজন, ওই কিশোর সহ স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল টিটিএন কে জানান, " রিয়াজের মোবাইল খোঁয়া গেলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কোটবাজার থেকে সেটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ওই মোবাইলের সব ডাটা মুছে ফেলা হয়েছিলো (ফরম্যাট)। "
মোবাইলটি যার হাতে পাওয়া গেছে সে ব্যক্তি সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে রিয়াজের মরদেহ উদ্ধারের সময় সহায়তা করা প্রতিবেশী ঐ কিশোরের কাছ থেকে নিয়েছিলো বলে পুলিশ'কে স্বীকারোক্তি দেয়।
কিশোরটি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে মোবাইল চুরির সত্যতা স্বীকার করলে এবং রিয়াজের মৃত্যুর সাথে এই চুরির সাথে কোনো সম্পর্ক না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান রাসেল।
রাসেল আরো বলেন, " পরিবারের ভাষ্য ও আলামত বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা মনে হওয়ায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রেক্ষিতে মরদেহ দাফন করার অনুমতি দেওয়া হয়।"
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্থানীয় সংবাদকর্মী তানভীর শাহরিয়া লিখেছেন, "উখিয়ার আওয়ামীলীগ নেতা রিয়াজুল হক রিয়াজের মৃত্যু রহস্যময়! নানান নাটকীয় ভাবে দাপন সম্পন্ন | পরিকল্পিত হত্যার আভাস | বিষয়টি তদন্ত জরুরি"।
অন্যদিকে একটি ডায়েরীতে রিয়াজের লিখে যাওয়া কিছু বিবরণ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে সেটি, আসলেই রিয়াজ লিখেছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে ঐ ডায়েরীর দুই পৃষ্ঠায় জায়গা জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ, সাংসারিক অশান্তি ছাড়াও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে না পাওয়ার আক্ষেপ সহ রিয়াজের বিভিন্ন দুঃখ-অপ্রাপ্তির কথা লেখা ছিলো।
তাঁর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করে দেওয়া এক বিবৃতিতে সদ্য নির্বাচিত উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, "তুখোড় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী মানুষটি ছিলেন দলের নিবেদিত প্রাণ। "
রিয়াজুল হক রিয়াজ নব্বই দশকের এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উখিয়ায় সম্মুখসারীর ছাত্রনেতা ছিলেন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের পর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সহ সভাপতি ছিলেন তিনি।