মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতি অভিযান চালানোর সময় দেশটির সেনা সদস্যরা অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম নারীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আট রোহিঙ্গা নারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ করেন।
এ ছাড়া মানবাধিকার সংগঠনগুলোও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে। এসব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। গত শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানায়।
নির্যাতনের শিকার নারীদের ভাষ্য, সেনারা গত সপ্তাহে তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়, লুটপাট চালায়। বন্দুকের মুখে তাঁদের ধর্ষণ করে। অভিযোগকারী তিন নারীর মুখোমুখি সাক্ষাৎকার নিয়েছে রয়টার্স। বাকি পাঁচজনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে টেলিফোনে। এর পাশাপাশি মানবাধিকারকর্মী ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সব অভিযোগ স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
৪০ বছর বয়সী এক নারীর অভিযোগ, চারজন সেনা তাঁকে ধর্ষণ করেছে। তাঁর ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে তারা লাঞ্ছিত করেছে। তাঁর গহনা ও নগদ অর্থ নিয়ে গেছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জ হতে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর কাছে একটি মেইল করা হলেও তার জবাব দেয়নি তারা।
এদিকে শুধু গত ১৯ অক্টোবর একটি গ্রামেই ৩০ জন রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা মানবাধিকার সংস্থা ‘আরাকান প্রজেক্টের’ পরিচালক ক্রিস লেওয়া। তিনি জানান, গত ২০ অক্টোবর একটি গ্রামের দুই নারী ও ২৫ অক্টোবর পাঁচ কিশোরী-তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
গত ২৫ অক্টোবর বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক (বিএইচআরএন) এক বিবৃতিতে বলেছে, চরম উদ্বেগের ব্যাপার যে সামরিক বাহিনীর অভিযানের সময় মংডু এলাকায় অন্তত ১০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীও আছেন। ধর্ষণের ফলে তাঁর গর্ভের শিশুটি নষ্ট হয়েছে।
বিএইচআরএনের কর্মকর্তা উ কেয়াও উইন বলেন, মিয়ানমার সরকার রাখাইনে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে এবং অপরাধ করেই যাচ্ছে। মিয়ানমার সরকার রাখাইনে যৌন নিপীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অঙ্গীকার করলেও তা মানছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের মংডুর একাধিক সীমান্তচৌকিতে হামলা হয়। বিদেশি ইসলামপন্থীদের সঙ্গে যোগসাজশে রোহিঙ্গাদের একটি উগ্র গোষ্ঠী এই হামলা চালায় বলে মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য। হামলার পর রাখাইন রাজ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। সেখানে অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্য ঘিরে ফেলে অভিযানের নামে ব্যাপকহারে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে, যাতে ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত মানবাধিকার হরণের অভিযোগগুলো স্বাধীনভাবে তদন্ত করা যায়।
২০০৮ সালে প্রণীত মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির সেনাবাহিনী যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে দায়মুক্তি পেয়ে আসছে। কিছু মানবাধিকার সংগঠন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করতে এই সাংবিধানিক দায়মুক্তির পরিবর্তন দাবি করে আসছে। সূত্র : কালেরকন্ঠ, রয়টার্স ও এএফপি।