মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক অস্থিরতার দিকে ভারত নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর। সোমবার নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাই কমিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান তিনি।
বৈঠক শেষে ভারতীয় মন্ত্রীর বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, তারা আমাদের বলেছে যে, ভারত সেখানে (রাখাইন রাজ্য) সৃষ্ট অস্থিরতার দিকে নজর রাখছে।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক অস্থিরতার ইস্যুতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত হবে কিনা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই সেই আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তিনি মনে করেন, এই সফরের ফলে এক বছরে (২০২১) ভারতীয় রাষ্ট্রপতি এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে শুরু হওয়া চক্রটি শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই ভালো। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ বাড়াতে তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের জনগণের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে এমন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ লক্ষ্যে এই অঞ্চলে আরও ভালো যোগাযোগের জন্য বিবিআইএন-এর মতো উদ্যোগকে বেগবান করতে হবে। নেপাল ও ভুটানকে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। এই সংযোগ মানে শুধু ভৌত সংযোগ নয়, এতে আছে জ্বালানি সংযোগ এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগ।
গ্রিড কানেক্টিভটির বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, গ্রিড কানেক্টিভটি বাংলাদেশকে নেপাল, ভুটান এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনতে এক অংশ থেকে অন্য অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সহায়তা করবে। এরই মধ্যে সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে।
আলোচনাকালে পানি বণ্টনের বিষয়টিও উঠে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল এ লক্ষ্যে মূল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা করেছেন যা বিশ্বে একটি সংকট তৈরি করেছে। উভয় নেতা সম্মিলিতভাবে সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
যুদ্ধের পটভূমিতে জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, পারস্পরিক সম্মত শর্তাবলীর ভিত্তিতে জ্বালানি উদ্বৃত্ত থাকলে বাংলাদেশ ভারত থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন, পানি ব্যবস্থাপনা, তথ্য ও সম্প্রচার, রেলওয়ে এবং বিএসআরআই-এর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার লক্ষ্যে খসড়া চূড়ান্ত করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য আরও অনেক ইস্যুর পাশাপাশি তিস্তা ও গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। শিগগিরই গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।
পাঠকের মতামত