নিউজ ডেস্ক ::
রাজনৈতিক চাপে পুলিশে নাভিশ্বাস
চাপ। রাজনৈতিক ক্ষমতার চাপ। চাপ সামাল দিতে বেসামাল হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশ প্রশাসন। যতই দিন যাচ্ছে ততই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আটকে ফেলছে পুলিশের হাত।
এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। বাড়ছে নানা বিড়ম্বনাও। পুলিশ বাহিনীর উপর মহলের রাজনৈতিক আদেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের নাভিশ্বাস অবস্থা।
কথা হয় পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে। তিনি উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। বলেন, ‘২০১৩ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছি। আমার চাকরি জীবনের যে অভিজ্ঞতা, তা রাজনীতি ঘিরেই। মাঠে থাকি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই। অপারেশনে যাই রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই। রাজনৈতিক কারণেই আসামি ধরি। ছেড়েও দিই একই কারণে।’
পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, মামলা নেয়া, আসামি গ্রেফতার বা ছেড়ে দেয়ার বেশিরভাগ হয় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ইশারায়। তবে গুটি চালে দলের আরো উপর মহল। ক্ষমতাসীন দলের নেতা আর পুলিশ মিলে এখন সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট পরম্পরায়। বিএনপি-জামায়াতের সময়ও তাই ছিল। কৌশল, পরিধি একই, বদলেছে কেবল ক্ষমতার প্রেক্ষাপট।
নাম প্রকাশ না করে রাজধানীর তেজগাঁও থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর বলেন, বর্তমান সরকার বেতন-ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি যে পরিমাণ সুবিধা আমাদের দিয়েছে, তা উল্লেখ করার মতো। সরকারের উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু মাঠে গিয়ে মানুষের ক্ষোভ বুঝতে পারি। শুধুমাত্র দলীয় নেতাকর্মীদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে গিয়ে সরকারের সকল অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একই কারণে পুলিশ বাহিনীও জনগণের শত্রু হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলা, থানায় দালালি, জমি দখল, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ বাণিজ্য, মাদক বেচাকেনাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এদের বড় বাণিজ্য হয় থানায় আসামি ধরিয়ে দেয়া ও ছাড়িয়ে আনার মাধ্যমে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দাগি আসামিকে ছাড়িয়ে নিতেও বিশেষ তদবির করেন প্রভাবশালী নেতারা।
Police
আর নেতার কথা না শুনলেই বদলি, হুমকি-ধামকি। অনেক সময় এ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের দুপক্ষের মধ্যে বিরোধও হয়। একপক্ষ কোনো আসামিকে ছাড়তে বললে অন্যপক্ষ তদবির করতে আসে। বিভাগীয় সিদ্ধান্ত এখন গৌণ। পুলিশ বিভাগে বদলির ক্ষেত্রে এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই মুখ্য।
থানার পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সার্কেল এএসপি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা পুলিশ সুপার রয়েছেন। আবার এদের উপরে রয়েছেন রেঞ্জ-এর ডিআইজি। তবে ওসিদের কাছে এখন আর সিনিয়রদের কথার কোনো মূল্য থাকে না। রাজনৈতিক কর্তারাই ঠিক করেন কে বদলি হবেন আর কে বহাল তবিয়তে থাকবেন।
কথা হয় ওএসডিতে থাকা রাজশাহী বিভাগের একটি জেলার এসপির সঙ্গে। বলেন, সবই পরিষ্কার। নতুন করে বলার কিছু নেই। চাপ তো আগে থেকেই ছিল। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েই সরকারের উন্নয়ন। কিন্তু কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তির কারণে সবাইকে বিতর্কিত হতে হচ্ছে। পুলিশের কর্মকাণ্ডও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকায় এক ওসির কারণে ডিসির বদলি হয়েছে। ওসি আসামি ধরে নিয়ে এলে ডিসি কৈফিয়ত চেয়েছিলেন। আর এ কারণেই ডিসিকে বদলি হতে হয়েছে।’
পুলিশের ওপর রাজনৈতিক চাপের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এই বাহিনীর ওপর রাজনৈতিক চাপ আগে থেকেই ছিল। এখন তা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। মানুষ আর পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারেছে না। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিজেরাও নিজেদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে না। পুলিশের সব কার্যক্রমই এখন রাজনৈতিক কর্তাদের হুকুমে চলে। যে কারণে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে লেজুড়বৃত্তি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আর এজন্য পুলিশের ওপর চাপ দিন দিন বাড়ছে। সুত্র, জাগো নিউজ