ড. মনওয়ার সাগর শিল্প সাহিত্যে এক অনিবার্য নাম। তাঁর পরিচিতি একাধিক কারণে পরিব্যাপ্ত। সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্ব ও প্রয়াস তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শিল্পসচেতন কবি হিসেবে, প্রাবন্ধিক ও পরিশ্রমী গবেষক হিসেবে তাঁর অধিষ্ঠান তর্কাতীত। বোধে, অনুভবে ও পারঙ্গমতায় তিনি মনে প্রাণে সৎ, সাহসী ও শুদ্ধ।ড.মনওয়ার সাগর এর নামটি এক মুক্তচিন্তক, সমাজসচেতন, বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়,যদিও তিনি নিজে লিখেছেন খুবই কম। তবে তাঁর পড়াশোনার পরিধি ও প্রজ্ঞার কারণে তাঁর এক কিংবদন্তি ইমেজ গড়ে ওঠে। তিনি তাঁর লেখনি ও সাহিত্য ভাবনা দিয়ে প্রজন্মকে প্রত্যক্ষ ভাবে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের জ্ঞান চর্চায় তাঁর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা ছিল তাদের পাথেয়। সামাজিক জীবনের উত্থানপর্বের তিনি ছিলেন পর্যবেক্ষক ও ক্ষেত্রবিশেষে অভিভাবক স্থানীয়।
ড.মনওয়ার সাগর কঠোর বাস্তবতাকে সহজ ও শোভন করে তুলে জনমানুষের কাছে থাকতে ভালোবাসেন, গল্প- কবিতার ভাষায় জীবনের মারাত্মক প্রহেলিকার কথা বলেন, প্রেমের কথা বলেন, মৃত্যুর কথা বলেন, আবার এমন সব সমস্যার কথা বলেন, যার সমাধান তাঁকেই করতে হয়।
ড.মনওয়ার সাগর জন্ম ১৯৬৬সালের ১ মে সন্দ্বীপে,বেড়ে উঠেছেন কর্ণফুলির পাড়ে। জলের কল্লোলে।ছোটবেলায় তাঁর আব্বা পরিবার পরিজন নিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসেন। তখন থেকেই তাঁর বসবাস দ্বীপের সীমানা পেরিয়ে কিছুদিন চট্টগ্রাম সিটি,কিছুকাল মীরসরাই উপজেলার আবুতোরাব ইউনিয়নে,পরবর্তীতে স্থায়ী নিবাস সীতাকুন্ড পৌরসভায়। তাঁর পিতা শিক্ষকতা করতেন,হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন, তাঁর হাতেই মনওয়ার সাগর এর লেখা-লেখির হাতে খড়ি।তাঁর পিতার নাম মোঃজিয়াউর রহমান,মায়ের নাম জাহানারা বেগম। পরবর্তীকালে চট্টগ্রামে স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেছেন।
ছাত্রজীবনে মনওয়ার সাগর প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি হিসাবে পরিচিত ছিলেন।প্রথম জীবনে মনওয়ার সাগর এর সাহিত্য-সাধনার মূল ক্ষেত্র ছিল কবিতা। পরবর্তীতে গল্প,উপন্যাস,প্রবন্ধসহ নানান গবেষণা কর্মও করেন,‘সরকার ও রাজনীতি’ বিষয়ে অনার্স করলেও পরবর্তিতে ইংরেজী সাহিত্যে এম এ,এম বি এ,এল এল বি, পি এইচ ডি ডিগ্রীও অর্জন করেন।সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, যন্ত্রণা ও বিক্ষোভ তাঁর লেখার প্রধান বিষয়বস্তু। তাঁর রচনাকর্মে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাণীসহ শোষণহীন এক নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে।নব্বই দশকে বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক ভাবধারাটি যাঁদের সৃষ্টিশীল রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, মনওয়ার সাগরও তাঁদের একজন।তাঁর কবিতার ছন্দ, ভাষা, রচনাশৈলী এত স্বচ্ছন্দ, বলিষ্ঠ ও নিখুঁত যে, তাঁর বয়সের বিবেচনায় এরূপ রচনা বিস্ময়কর ও অসাধারণ বলে মনে হয়।
তার জীবনবোধ, কবিতার স্বপ্ন, মা-মাটির গভীর অনুরাগের কাছে সব ভালোবাসা অসহায় হয়ে যেতো ,তাঁর মায়াময় মুখের ভেতর ভেসে উঠে বাংলাদেশের আকাশ, বুক থেকে উড়ে যায় যেন মায়ার ফড়িং। জীবন তাঁকে কত কষ্ট দিয়েছে, একমাত্র সন্তানের অসুস্থ্যতা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে, তবুও সব কষ্টের বিরুদ্ধে তাঁর প্রাণের অদম্য লাটিম ঘুরেছে একা একা। কষ্টগুলো তাঁর জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থেকে ক্ষান্ত হয়েছে, অবশেষে তাঁর কবিতায় শব্দ হয়ে, বাক্য হয়ে বিশ্রাম নিয়েছে। সে যেন কান্না্র জলকে কবিতায় কালি বানিয়ে ফেলে।
ড.মনওয়ার সাগরকে যতবারই দেখি মনে হয় যেন মানবিক আবেগমথিত সামাজিক ও স্বদেশপ্রিয় কারিগরকে দেখতে পায় আমরা।প্রিয় এ লেখক তার ফেইজ বুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘আমাদের আর্থিক বৈভব কখনো ছিলনা, তবে আমার জন্ম হয়েছিল একটি সম্পন্ন ও ঐশ্বর্যময় পারিবারিক পরিমন্ডলে। আমাদের গোটা পরিবারটাই ছিল একটা সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। মূল্যবোধ আর আত্মোৎসর্গের এক সমৃদ্ধ পরিবেশ ছিলো। উষ্ণতা, উদ্দীপনা,সৌহার্দ ও শক্তিমত্তা বহমান ছিল আমাদের পরিবারে। অবারিত আলোর উজ্জ্বল ও চাঞ্চল্যে ভরা ছিল। এর প্রধান কারন ছিল আমার আব্বা ছিলেন আদর্শ শিক্ষক আর মা ছিলেন মহিয়সি মা।আব্বা –আম্মা ছিলেন অনুভূতিশীল, স্বপ্নচারী মানুষ। মানুষের কল্যানে জাগ্রত হবার জন্য যতটুকু স্বপ্ন এবং বিবেক আক্রান্ত হৃদয় থাকা দরকার এর সবটুকুই তাঁদের ছিল।
ড.মনওয়ার সাগর বিয়ে করেছেন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে।টেকনাফের বড় হাজির পরিবার বললে একনামে সবাই চিনে।
আজ বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে আলোকিত এ মানুষটির গর্ভধারিনী মায়ের গল্প শুনাবো আপনাদের।এ সাক্ষাতকারটি নিয়েছিলেন কবি কানিজ মাহমুদ তার মা গ্রন্থের জন্য।সাক্ষাৎকারটি ছিল নিম্নরুপ
কানিজ মাহমুদঃ আসলে মাকে নিয়ে আমার সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন থাকবে,প্রথমেই জানতে চাইবো আপনার আম্মার নাম,আম্মার বিয়ে ও মাকে নিয়ে আপনার অনুভূতির কথা।
মনওয়ার সাগরঃ আমার আম্মার নাম জাহানারা বেগম।দেখতে আমার মত ছোট খাট উচ্চতার হলেও মনের দিক থেকে ছিলেন অনেক বড়। তাঁর স্নেহ মমতার বিশাল আঁচলের তলে আমরা ছয় ভাই চার বোনকে আগলে রেখেছিলেন গভীর মমতায়।আম্মাদের যুগটা ছিল বাল্য বিবাহের প্রথা ও নারী শিক্ষার প্রতিকূল পরিবেশের আড়ষ্ট সমাজ,সে সময় গ্রামীণ জনপদে নারী শিক্ষার অপ্রতুলতার মুল কারণ ছিল বজ্র অটুট বাধা ও শৃংখল।যার জন্য প্রথমিক শিক্ষা শেষ করে পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষার সুযোগ ছিল চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ।বাকী সময়টা গৃহ শিক্ষকের কাছেই বিদ্যা চর্চা করেন।গ্রন্থ পাঠের চর্চা আম্মার অনিসন্ধিৎসু মনকে গভীর ভাবে আকৃষ্ট করত। আম্মার ছোট বেলা থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার চেয়েও সুকুমার বৃত্তি মূলক পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল বেশী।নানাজান বলতেন আম্মার স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত পরিবারের স্বশিক্ষিত প্রতিভাময়ী মেয়ে হিসেবে আম্মা সুনিশ্চিত প্রতিষ্ঠার মসৃন পথ না পেলেও ত্যগের মধ্য দিয়ে আত্মনিবেদনের দুর্গম যাত্রায় প্রবৃত্ত ছিলেন।
১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ অক্টোবর বুধবার আমার আম্মার বিয়ে হয়।আব্বা তখন কলেজের ছাত্র ছিলেন।বিয়ের পর আব্বা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।সেদিন অঝোর বৃষ্টি ছিল,বৃষ্টিকে মাড়িয়ে সন্দ্বীপের বিশিষ্টজনেরা বিয়েতে অংশ গ্রহণ করেছিল।তখনকার সময় বিয়ে হতো পালকি চড়ে।দক্ষিণ সন্দ্বীপের খান বাহাদুর,শিক্ষাবিদ আবুল খায়ের খান,নুরুল হুদা মাস্টার,গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী,আসাদুল হক (সাব মিয়া),শামসুদ্দিন চৌধুরী,এডভোকেট মোজাম্মেল হক মিয়া,মান্নান মিয়াসহ সন্দ্বীপের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
আসলে আমাদের জীবনটা সৌভাগ্য দ্বারা বারিত। বলা যায় আমরা ভাই বোনেরা সৌভাগ্যের মানসপুত্র/মানসকন্যা। কারন আমরা এমন উচ্চ মূল্যবোধ সম্পন্ন মা পেয়েছি. আমরা ৬ ভাই, ৪ বোন,প্রত্যেকে যার যার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে এখন চট্টগ্রাম বন্দরে আছেন, আমিও সরকারী চাকুরী করি অডিট বিভাগে।ছোট ভাই আমজাদ ইউ এ ই তে আছেন,ভালো জব করেন,ব্যাবসা করেন, আরিফ রাকিব দুজনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেসরকারী সংস্থায় ভালো জব করেন,সর্বকনিষ্ঠ্ ভাই সাকিল সময় টিভি ঢাকা এর সাংবাদিক।বোনদের মধ্যে বড় জন নিউ ইয়র্ক,ইউ এস এ আছেন,বাকীরা বাংলাদেশেই আছেন।একজন বিজয় সরণী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক,একজন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর ডি জি এম,অন্য জন ব্যাবসা করে।সবাই সুখেই আছে।
ছোটবেলা থেকেই তো একটি সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে উঠেছি আমরা, বলা যায় সাংস্কৃতিক বাতাবরণে আমরা বেড়ে উঠেছি এক নিরাভরণ আবহে। আমরা ভাই-বোনেরা অনেক সৌভাগ্যবান যে আমরা আমাদের আম্মার মতো শিল্প অনুরাগী আম্মা পেয়েছি। আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই শিল্পের প্রতি আমার অদম্য আকর্ষণ অনুভব করি। তারই সূত্র ধরে ছোট বোন লিপির সাথে গান শিখি, তানপুরায় আঙুল চালাবার খুব স্বপ্ন ছিল কিন্তু গ্রামে কোনো ওস্তাদ না থাকায় শিখা হয়নি । গান আমি ভালোবাসি কিন্তু গান আমার শেখা হয়নি ওভাবে, যতোটা শিখলে শিল্পী বলা যায়। এই যে শিখবার অদম্য আগ্রহ তা আমার আম্মার কাছ থেকেই পেয়েছি।
আমি আমার শিশু সন্তান স্বপ্নীলকে যখন তার মায়াবতী মায়ের কোলে আদরে সোহাগে দেখতাম তখন ছোট্ট বেলার মায়ের কোলের কথা মনে পড়ে,কেবলই মনে হয় আম্মা আমার ছোট্ট বেলার প্রথম ভালোবাসা,নিরপত্তা আর মমতায় ঘেরা সেই কোল,সেই উষ্ণতার পরশে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই মন।সঙ্কট কালে সব সময় মনে হয় যদি সব ছেড়ে মায়ের স্নেহমাখা কোলে মুখ লুকাতে পারতাম,তবে পথিবীর কোনো কষ্টই আমাকে স্পর্শ করতে পারতোনা।দশ্যত মা কারও কাছে থাকে।কারো কাছে থাকেনা কিন্তু মা আছেন সব সময় সবার কাছে।আম্মা মুক্তিযুদ্ধের সময় সন্দ্বীপে গ্রামের বাড়ীতেই ছিলেন,মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি দেখেননি,তবে যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছেন তাদের সুযোগ পেলে দেখবাল করতেন। আমাদের বাড়ীর হাফেজ দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন,মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন।
আম্মা তার অন্তরের সূধা,মাধুর্য ও ধৈর্য্য দিয়ে তিল তিল করে আমাদের ৬ ভাই ৪ বোন কে বড় করে তুলেছেন।আমাদের ভাই বোনদের জীবনে আম্মার ভূমিকা কত অতলান্ত,কত উচ্চতম,কত জীবন্ত,কত শ্রমসাধ্য তা বলে শেষ করা যাবেনা।চাকরির জন্য নিজ গ্রামের বাইরে থাকা,আম্মা গ্রামের বাড়ী ছাড়া একদম কোথাও থাকতে চাইনা।আব্বা থাকতে চাইলেও আম্মার অনুপস্থিতিতে একাকিত্ববোধ করেন।কী অসম্ভব বন্ডিং আছে দুজনের।আমার আম্মা স্বল্পশিক্ষিত হলেও আসলেই জ্ঞান তাপসী-বিদূষী,অসম্ভব সাহিত্যানুরাগী, গল্পউপন্যাসের একনিষ্ঠ পাঠক।একদিন বাড়ীতে গিয়ে শুনলাম আম্মা আনিসুল হক এর মা উপন্যাসটি পড়ে কেঁদেছিলেন।লেখকদের প্রতি আম্মার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে।হজ্ব করার পর কাউকে এখন আর দেখা দেয়না,তবুও অনেক লেখক আমাদের ঘরে গিয়ে আম্মাকে সালাম জানিয়ে এসেছেন। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন,শিরিন বকুল সরাসরি আম্মার সাথে সাক্ষাত করেছেন,অনেক সময় নিয়ে গল্পও করেছেন। পারিবারিক যে কোনো বিষয়ে আম্মার মতামতের উপর আব্বা পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকতেন।আম্মা হচ্ছেন প্রচন্ড মাতৃসুলভ অন্যদিকে নিজের বিশ্বাস থেকে পড়াশুনা থেকে যখন কোন মতামত দিতেন,সেই মতামতেই অটুট থাকতেন। আম্মার প্রত্যেকটি বিষয়ে অসম্ভব পরিমিতিবোধ আমাদের রীতিমত অবাক করে।জীবানাচারন,বেড়ে ওঠা সবকিছু গ্রামে হলেও আম্মা খুব সৌখিন মহিলা।আগোছালো,অপরিষ্কার চলাফেরা একদম সইতে পারতেন না।আমাদের ঘরটাকেও আম্মার ইচ্ছে মত সাজিয়েছেন,ঘরের প্রতিটি রুমে আম্মার রুচির ছোঁয়া আছে।ঘরে ছেলের বউ আসার পরও আম্মার হাতের বেকড করা রান্না খেতে আব্বা পছন্দ করতেন।আম্মার বেকিংয়ে একটা জাদু আছে।শত চেষ্টা করেও একই রেসিপির স্বাদ কোনো বউ আনতে পারতোনা।অসম্ভব ভালো রান্না করতেন আম্মা,রান্নার মধ্যেও আম্মার মায়া মাখানো থাকতো।আমার স্ত্রী যতবার গ্রামে যেত আসার সময় আম্মার হাতের রান্না নিয়ে আসতো। জীবন সায়াহ্নে এসেও একদম বসে থাকেন না।সারাদিন ফরজ নামাজ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার নফল নামাজ পড়েন,কোরান তেলাওয়াত করেন,অবসরে বাগানের আগাছা পরিষ্কার,রান্না,পিঠা বানানো নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন।আমরা যাবো বলে পিঠা বানিয়ে রাখতেন।
কানিজ মাহমুদঃ মাকে কতটা ভালোবাসেন?
মনওয়ার সাগরঃ এ প্রশ্নের কি জবাব হয়?তুলির এক আঁচড়ে যেমন ছবি হয় না, তেমনি মাকে কতোটা ভালোবাসি এক কথায় কী আর তার মাহাত্ম প্রকাশ করা যায়! মা হচ্ছেন রঙধনু। যার হরেক রঙ। কখনও তিনি মমতাময়ী মা, কখনও পথনির্দেশক, বিপদের আশ্রয় আর কখনওবা সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।পৃথিবীর সবকিছু বদলায়, বদলায় না শুধু সন্তানের প্রতি মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।আম্মাকে আমরা সব ভাই বোন অনেক ভালোবাসি,পৃথিবীর কোনো কিছুর সাথে এ ভালোবাসার তুলনা হয়না।
কানিজ মাহমুদঃ যদি জিজ্ঞেস করি আপনার মা কেন সেরা মা,তবে কি বলবেন?
মনওয়ার সাগরঃ পৃ্থিবীর সব মা’ই সেরা মা।কোন শব্দে এতো আকুলতা,এতো আবেগ,এতো নিবিড় টান, শেকড়ের টান নেই।মা শাশ্বত, চিরন্তন।এই একটি শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর গভীর ভালোবাসা। ত্যাগের জন্যই যেন মায়ের বেঁচে থাকা।মা হচ্ছে মাথার উপর নিরাপদ ছাতা।আমার আম্মা সেরা মা এজন্যযে,আমি না বললেও আম্মা ঠিকই বুঝতো আমার কোন হাসির পিছনে কান্না আছে, কোন কান্নার মানে আনন্দ, কোন নিশ্বাসের পিছনে দীর্ঘশ্বাস আছে!
কানিজ মাহমুদঃ মায়ের কোন কষ্ট দেখে জীবনে কেঁদেছিলেন কিংবা মায়ের জন্য কি কখনো কেঁদেছিলেন?
মনওয়ার সাগরঃ শৈশবে আম্মা আমাকে নিয়ে যে কষ্ট করেছেন সেসব গল্প শোনে কেঁদেছি বার বার।যতোবার এ গল্প শোনেছি ততবারই কেঁদেছি।গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে ,আত্মীয়-স্বজনের কাছে শুনেছি জন্মের কিছুদিন পর আমি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি,হাত মুখ খিচে যায়,জবান বন্ধ হয়ে যায়,আব্বা-আম্মা অনেক কষ্ট করেছেন আমাকে নিয়ে।এ বছর কেঁদেছিলাম সুখের কান্না।আমার স্ত্রীর সাথে আলাপ চারিতায় আম্মা জানতে পারলো-এ বছর আমরা ইলিশ মাছ খেতে পারিনি।আসলে এতো দাম দিয়ে ইলিশ ক্রয় করার সামর্থ্য আমার ছিলনা।আম্মা ঠিকই বুঝতে পেরেছে।গ্রামে গেলে আম্মা অনেকটা জোর করে আমার স্ত্রীকে বেশ কয়টা বড় ইলিশ মাছ দেয়।আমার স্ত্রী না নিতে চাইলেও আম্মা বললো-এগুলো আমি তোমাদের জন্য ক্রয় করেছি।একেই বলে মা।বাসায় এসে আমি সত্যি অনেক কেঁদেছি।আমি টের পাই আমার বুকের কান্নাগুলো জলের ধারা হয়ে নেমে আসছে দু’গাল বেয়ে। আমি অনেকক্ষণ ধরে কাঁদি আর মনে মনে মাকে ডাকি। এক সময় হালকা হয় বুকটা। কিন্তু আমি জানি মায়ের জন্য আমার এই দীর্ঘশ্বাস থামবার নয়।
কানিজ মাহমুদঃ আপনার কিংবা আপনার ভাই বোনদের জীবনে মায়ের অবদান সম্পর্কে কি বলবেন?
মনওয়ার সাগরঃ আমাদের জীবনে আম্মার অবদান বলে শেষ করা যাবেনা।আমার আম্মা অসম্ভব মমতাময়ী,স্নেহপ্রবণ ও যত্নবান ।সন্তানের জন্য কত উদ্বেগ, কত উৎকণ্ঠা। আমাদের ভাই বোনদের পড়ালেখার ব্যাপারেও আম্মার অবদান ছিল।আব্বা ছিলেন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।তখন হাই স্কুলের হেড মাস্টারের বেতন ছিল মাত্র ৩৬০ টাকা।আব্বা তখন কাট্টলী নূরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের হেড মাস্টার ছিলেন। সামান্য এ বেতনে ১০ভাই বোনের সংসার চালানো কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।ভাইজানের ইচ্ছা ছিল সংসারের হাল ধরবে।আম্মা ভাইজানকে চাকুরী করতে দেননি। আম্মা তার স্বর্ণ বিক্রী করে ভাইজানকে পড়িয়েছেন।আমার ভাইজান সাখাওয়াত হোসেন সেলিম ছোটভাই আতাউল হাকিম আরিফ এবং শামসুর রহমান রাকিব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
আমাদের ভাই বোনদের পরীক্ষা এলেই দেখতাম আম্মা রোজা রাখতেন,কিংবা একটু অসুস্থ্য হলেই নামাজ রোজার মানত করেন।এমন ভালোবাসার কোনো সংজ্ঞা হয় না, ব্যাখ্যা হয় না।জীবনে যেটুকু পথ চলতে শিখেছি তার পুরোটা বলবোনা সিংহভাগই আম্মার অবদান,বাকীটা আব্বার।জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসেও যখন এম বি এ,এল এল বি,পি এইচ ডি করলাম সেখানেও আব্বা-আম্মার যথেষ্ট উৎসাহ ছিল।আমার আম্মা স্বল্প শিক্ষিত হলেও পড়ালেখার ব্যাপারে খুবই উৎসাহী ছিলেন।এমনিতেই আম্মা খুবই বই পড়ুয়া ছিলেন।
কানিজ মাহমুদঃ এখনও কি কোনো অপূর্ণতা বয়ে বেড়ান যেটা মায়ের জন্য করা দরকার ছিলো?
মনওয়ার সাগরঃ অপূর্ণতা একটাই জীবনে তেমন কোনো বড় অর্জন নেই যা মাকে খুশী করতে পারে।আম্মার স্বপ্ন ছিল বি সি এস ক্যাডার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার, হতে পারলামনা।ছাত্র জীবনে ডান পীঠে স্বভাবের ছিলাম।বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ালেখায় কিছুটা অমনোযোগী হয়ে গেলাম।তখন আমলা হবার স্বপ্ন ছিলনা,স্বপ্ন ছিল দেশ প্রেমের,মন্ত্রী এম পি হবার স্বপ্ন।আম্মা চেয়েছিলেন আমাদের জীবনে যেন একটি সফলতার গল্প তৈরী হয়,সফলতা বলতে যা বুঝাই তা আজও অর্জন করতে পারিনি।আমাদের সব ভাই বোনের একটিই স্বপ্ন মায়ের জন্য যেন একটি সফলতার গল্প তৈরী করতে পারি।এই ধরুন স্কুল কলেজ কিংবা দাতব্য হসপাতাল তৈরী করা,মানুষের জন্য কাজ করা।অবশ্য আমরা আব্বা –আম্মার নামে ‘জিয়া –নূর ফাউণ্ডেশন’ করেছি।ভবিষ্যতে ‘জিয়া –নূর ফাউণ্ডেশন’ এর মাধ্যমে মানুষের কল্যানে কাজ করার পরিকল্পনা আছে।
কানিজ মাহমুদঃ মাকে নিয়ে কোন মধুর স্মৃতি বলবেন?
মনওয়ার সাগরঃ মা শব্দটির মাঝেইতো হাজার স্মৃতি লুকিয়ে আছে।মা খোদার এক অপার বিস্ময় সৃষ্টি!এতো ভালোবাসা, দরদ, মোহাব্বত দিয়ে আল্লাহ মাকে সৃষ্টি করেছেন যে,যার পায়ের নীচে আমাদের জান্নাত রেখেছেন।মা মরু প্রান্তরে প্রান ফিরে পাওয়ার মতো শব্দ। সকল ভালোবাসার রেখা যেনো ওই মা শব্দে গিয়েই মিলিত হয়েছে। কী চমৎকার!কী মধুমাখা এক শব্দ। তুলনাহীন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক ভালোবাসার উৎসের জায়গা মা। মায়ের সৌন্দর্য ও মহত্ব সন্তান সন্ততির কাছে সে আরেক দরিয়া। কূল কিনার নেই। অকূল পাথার। সন্তানের প্রতি মায়ের দয়া-মায়া যেমন তুলনাহীন ঠিক তেমনি মায়ের সৌন্দর্য সন্তানের কাছে অতুলননীয়।
তো একটা মধুর স্মৃতির কথা বলি -আমি যখন আমার কর্মস্থল থেকে প্রথম বাড়ীতে এলাম আম্মা আমার জন্য অনেক রকমের খাবার তৈরী করলো।জোছনা রাতে আমরা সব ভাই বোনেরা মাদুর বিছিয়ে উঠানে বসলাম।গানের আসর বসলো।ছোট বোন লিপি গাইল ‘আজ জোছনা রাতে সবাই ---‘ লিপি জাত শিল্পী ছিল।সংগীতে,আবৃত্তিতে উপজেলায় অনেকবার ফার্স্ট হয়েছে।আমার আমেরিকা প্রবাসী ছোট বোন পপিও ছিল তখন।সে আমায় জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা ভাইজান বলতো দেখি ‘কে বেশি সুন্দর? চাঁদ নাকি মা’?
উত্তরে আমি বলেছিলাম-আমি আসলে জানিনা, কে বেশি সুন্দর! মা নাকি চাঁদ! তবে একটি কথা হলফ করে বলতে পারি- আম্মাকে যখন দেখি তখন আমি চাঁদের কথা ভুলে যাই। আর চাঁদকে যখন দেখি তখন আমার আম্মার কথা মনে পড়ে!কথাটি শুনে আম্মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন অন্য রকম এক ভালোবাসায়,আবেগে।আজও আমি সে মধুর স্মৃতি ভুলতে পারছিনা।
কানিজ মাহমুদঃ মা কেন আর্দশ আপনার জীবনে?
মনওয়ার সাগরঃ আম্মা আমার শৈশবের প্রথম শিক্ষক,সবচেয়ে বড় শিক্ষক।আমার সাহিত্য কর্মের সব লেখায় আমি মায়ের ছোঁয়া পাই।স্বাধীন জীবনের মধ্যেও কিভাবে শৃংখলা নিয়ে চলতে হয় সেটা আম্মা আমাদের শিখিয়েছেন।বিকালে খেলতে দিতেন কিন্তু সন্ধ্যা হলেই ফিরতে হতো।আম্মা বলতেন তোমাদের স্বাধীনতা দিয়েছি তবে মনে রেখো ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সুশৃংখল জীবনযাপন করতে হবে।নামাজের সময় নামাজ পড়তে হবে,সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিলে থাকতে হবে।তিনি আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে বড় করেছেন কিন্তু ধর্মান্ধ করে গড়ে তুলেননি। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে কখনও ভীত সন্ত্রস্ত হননি।আমরা দশ ভাই বোনকে গড়ে তুলতে গিয়ে নিজের সব সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন।
কানিজ মাহমুদঃ এই যে বললেন সাহিত্য কর্মের সব লেখায় আপনি মায়ের ছোঁয়া পান,বলবেন কেমন ছোয়া সেটা?
মনওয়ার সাগরঃ আমি যখন লিখতে বসি ঝলঝলে পূর্ণিমার চাঁদটা আমার চোখের সামনে হয়ে যায় মায়ের উদ্ভাসিত মুখ।আমি হাত বাড়াই মায়ের মুখটি একবার ছুঁয়ে দেখার লোভে। বারান্দায় যায়, বারান্দায় গ্রীলে আটকে যায় আমার হাত। অবচেতন মনে আম্মা আমাকে লেখার শক্তি যোগায়। আমি আবারও লেখায় নিমগ্ন হই। শৈশবে আম্মার কথাগুলো কানে বাজে।তখন আমি অকপটে সাজাতে পারি মনের সব কথা, অবলীলায় বলতে পারি ছন্দের কারুকার্যে।শব্দের সিঁড়ি বেয়ে ছন্দের দোলায় দুলতে থাকে কবিতা।
কানিজ মাহমুদঃ মায়ের কোন আচরণ,কথা আপনাকে বেশি টানে?
মনওয়ার সাগরঃ সারাটা দিন না খেলে তো পৃথিবীর কেউ খবর রাখে না, এক বেলা না খেলে কিবা হয়?অথচ শৈশবে একবেলা ভাত না খেলে আম্মা বলতো 'ভাতের উপর রাগ করিসনা খোকা,আল্লা গুনা দিব।সামান্য কাশিতেই কী যে উৎকণ্ঠা ছিল,‘তোরে না কইছি ফ্যান চালাইয়া ঘুমাবিনা,দেখছস কি কাশিটা অইছে’, কিন্তু এখন জ্বরে গা পুড়ে গেলেও অফিসের কাজ করি, ছাত্র জীবনে সামান্য জ্বর হলেও আম্মা বলতো,‘কিরে মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে কেন? তোর কন্ঠ এমুন লাগতাছে কেন? খাইছস নি? এরপর মাথায় হাত দিয়ে বলতো ইসরে জ্বরে গা টা পুইড়া যাইতাছে'একবার আম্মা গ্রাম থেকে আমার বাসায় এসেছিল,গায়ে সামান্য জ্বর দেখেই আমাকে আর অফিস করতে দেয়নি।এখন আমার স্ত্রীকেও দেখছি আমার ছেলের ব্যাপারে একই অনুভূতি।আসলে মা প্রতিটি সন্তানের জন্য এক অনন্ত আশ্রয়।
জীবনের এ সায়াহ্ন বেলাতে সে সব স্মৃতি ইথারে ভেসে ভেসে আসে। আমার বিষণ্ণতা গিয়ে ছুঁয়ে যায় মায়ের সে সকল আচরন ভালোবাসা। মাঝে মাঝে মনে হয় এই শহরের তপ্ত রোদে রোদচশমার আড়ালে কত সহজেই না ঢেকে যায় আমার বিষণ্ণতা।
কানিজ মাহমুদঃ শৈশবে মাকে নিয়ে দেখা কোনো স্বপ্নের কথা মনে পড়ে?
মনওয়ার সাগরঃ ছোটবেলা ভয়াবহ সব স্বপ্ন দেখতাম আমি। নক্ষত্র ছিটোয় আকাশ থেকে পড়ছি তো পড়ছি কিংবা বান্ধববিহীন বিষাদে দৌঁড়ুচ্ছি ভাঙা কবরের উপর দিয়ে। চারদিকে লাশ, কোন কবর ভেঙে পড়ে যাচ্ছি আমি গলিত লাশের মাঝে।পথ শেষ না হওয়া এমন সব ভয়াবহ স্বপ্ন। তখন কেঁপে উঠতাম স্বপ্ন দেখে, মাকে জড়িতে ধরতাম ত্রাসে।এখন বড় হয়ে গেছি।হয়তো ওভাবে স্বপ্ন দেখা হয়না, তবে আম্মাকে খুব মনে পড়ে।আম্মা গ্রামের বাড়ীতেই থাকে,তবুও আব্বা-আম্মা বেঁচে আছেন বলে মনে হয় মাথার উপর একটা ছাদ আছে।আমরা সব ভাই বোন একত্র হই মাঝে –মধ্যে।গ্রামে যাওয়া হয় বেশ।জানিনা আব্বা আম্মা না থাকলে কেমন লাগবে।তবে মনে হচ্ছে হাজার মানুষের ভীরেও নিজেকে বড্ড নি:সঙ্গ মনে হবে।
কানিজ মাহমুদঃ মা সম্পর্কে শেষ কথা বলুন।
মনওয়ার সাগরঃ আমার কাছে মা মানে অসম্ভব এক মায়াবতী নারী। সন্তান পেটভরে খেলে যার নিজেরই পেট ভরে যায়। এক ভিখারী নারীকে দেখেছিলাম- পেটভর্তি ভাত দুই বছরের সন্তানের সামনে দিয়ে নিজে অভুক্ত বসেছিলেন। বলেছিলেন, শিশুটি ‘চোখভরে‘ খাবে। এই চোখভরা মানে যে দৃষ্টি ক্ষুধা মিটানো। মা ছাড়া অন্য কেউ কি এই কথাটি অনুভব করবে ? গ্লাসভর্তি দুধ নিয়ে সন্তানের পড়ার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা সেদ্ধ ডিম হাতের মুঠোতে নিয়ে পিছু পিছু হাঁটা, যাতে সুযোগমতো ছেলের মুখে ঢুকিয়ে দেয়া যায় !! এই আমার মা ! আমার মা !!পরিশেষে সে গানটির মত করে বলবো- 'রাজার আছে রাজমহল আমার আছে মা! মা ছাড়া এই দুনিয়ায় আর কিছু চাই না দমে দমে তুমি মা মনে মনে তুমি মা।'