জসিম মাহমুদ,টেকনাফ ::
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও নিযার্তনের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এরসঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালানও পাচার হয়ে আসছে। শুরু থেকেই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে কড়া পাহারা দিচ্ছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। এরপরও থেমে নেই ইয়াবা পাচার।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের কিছু সেনা ইয়াবার ব্যবসার সঙ্গে এখন সরাসরি জড়িত। তারা কিছু রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে সেদেশে চোরাকারবারীদের সঙ্গে আতাত করে বাংলাদেশে ইয়াবার বড় বড় চালান পাচার করছে বলে আমাদের হাতে তথ্য প্রমাণ রয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি বিজিবির সদস্যরা ইয়াবা চোরাচালানও বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিজিবি সতর্ক বলেই বড় বড় বেশি চালান ধরা পড়ছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, মিয়ানমার সব সময় বাংলাদেশকে দুটি বিষয়ে চিন্তায় রেখেছেন। তারমধ্যে একটি হলো রোহিঙ্গা, অপরটি মরণ নেশা ইয়াবা। এরমধ্যেও পুরো সীমান্ত এলাকায় বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কড়া পাহারা থাকলেও মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসা বন্ধ নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টেকনাফের সাধারণ স¤পাদক আবুল হোসেন বলেন, মিয়ানমার বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ও ইয়াবা দিয়ে সবসময় চেপে রেখেছেন। এরমধ্যে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে আরও প্রায় সাড়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গার সঙ্গে এখন রাতের আধাঁরে ইয়াবার চালান আসছে।
বিজিবি ও র্যাব সূত্র জানায়, ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে বিজিবির সদস্যরা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটির উত্তর পাশের রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা থেকে এক বস্তা এক লাখ ইযাবা বড়ি উদ্ধার করা হলেও এঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
২৯ সেপ্টেম্বর টেকনাফ বড়ইতলী এলাকায় নাফ নদীর কেওড়া বাগান এলাকায় একটি হস্তচালিত নৌকা থেকে ২০ হাজার ৯২৫ পিছ ইয়াবা বড়িসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তারা হলো- মিয়ানমারের মংডু শহরের আশিক্কাপাড়া মো. ফয়সাল (২০), নাপিতেরডেইল মোহাম্মদ আলী (২০) ও কাইনখালীর মো. আব্দুল (২০)।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার ভোররাত চারটার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সংলগ্ন সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা দিয়ে একটি ট্রলারসহ চারজনকে আটক করে র্যাব। এসময় ট্রলারে তল্লাশি চালিয়ে ৮ লাখ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। ট্রলারে থাকা চারজন পাচারকারীর মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক। তারা হলো-হাবিব উল্লাহ (২৪), মো. জমিল (২৪), বদি আলম (৪৫) ও টেকনাফের মো. আলী (৪৫)।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিজিবির সদস্যরা নাফনদী থেকে একটি নৌকা ও ৪লাখ ৩৫ হাজার ৮০৫ পিস ইয়াবা বড়িসহ দুই নাগরিককে আটক করা হয়। আটক দুজন হলো-মিয়ানমারের মংডুর মাংগালার মো. কামাল আহমদ (৪৫) ও মো. ইলিয়াস (৩০)।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ান র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যা¤পের কো¤পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, গত এক সপ্তাহে টেকনাফ থেকে ৮ লাখ ইয়াবা বড়িসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে।
টেকনাফের জেলেরা বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ করতে গত আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্থানীয় প্রশাসন নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ করে দেওয়াই জেলেরা মাছ ধরতে নামতে পারছেন না। কিন্তু এরই মধ্যে রাতে নৌকায় করে ইয়াবার বড় বড় চালান আসছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, বিজিবির সদস্যরা গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত দুই সপ্তাহে টেকনাফের আছারবনিয়া, ঝিনাপাড়া, নাইট্যংপাড়া, টেকনাফ সদরের আব্দুল গফুরের চিংড়ি খামার ও শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে ১০ লাখ ৬১ হাজার ২৫৫ পিস ইয়াবা বড়িসহ ২৩জনকে আটক করা হয়। তারমধ্যে ১৭জন রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন।
বিজিবি সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসে টেকনাফে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে পাচার কালে বিজিবির সদস্যরা ৫ লাখ ১৯ হাজার ১১৯টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করেছে। এসময় ২৯জনকে আটক করা হয়। তারমধ্যে অধিকাংশ আটক ব্যক্তি ছিলেন মিয়ানমারের নাগরিক।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খাঁন বলেন, নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা চোরাচালান থেমে নেই। তার স্থলপথে পাচারের সময় পুলিশও কয়েকটি ইয়াবার ছোট চালান ধরেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কক্সবাজার জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী বলেছেন, ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ...
পাঠকের মতামত