কক্সবাজারের রামুতে কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়িতে বানের পানিতে ডুবে ইশমাম নামের ৭ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কাউয়ারখোপ ইউনিয়ে পাহাড় ধ্বসে একই পরিবারের ৩ জন আহত হয়েছে। এরমধ্যে গুরুতর আহত ৭ বছর বয়সী শিশু তাসফিয়াকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢল ও পাহাড় ধ্বসে শতাধিক বসত বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্নস্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
দক্ষিণ মিঠাছড়ি একে আজাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া এলাকায় ঢলের পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে ৮ বছয় বয়সী ইশমাম। সে ওই এলাকার কৃষক ইমাম উদ্দিনের ছেলে। পুরো এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ইশমাম পাড়ার অন্যান্য শিশুদের সাথে পানিতে খেলা করছিলো। ওই সময় ভেলা থেকে পড়ে সে প্রাণ হারায়। ফলে এ আনন্দ মূহুর্তে বিষাদে রূপ নেয়। শিশু ইশমামের মৃত্যুতে পরিবারটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানিয়েছেন, প্রবল বর্ষণে ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের টিলাপাড়া এলাকায় বুধবার দিবাগত রাতে মাটির বসত বাড়ির দেয়াল ধ্বসে একই পরিবারের ৩ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- গৃহকর্তা দিনমজুর বাবুল মিয়া (৩৫) ও তার স্ত্রী কুলসুমা বেগম (২৮) ও মেয়ে তাসফিয়া (৭)। এদের মধ্যে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় শিশুকন্যা তাসফিয়াকে বৃহষ্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহত কুলসমা বেগম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে।
চেয়ারম্যান শামসুল আলম আরও জানিয়েছেন, এরআগে টানা প্রবল বর্ষণে ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সিএনজি চালক আবদুর রহিমের বসত বাড়ি মাটি চাপা পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ সহায়তা দেন। তিনি আরও জানান- টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইউনিয়নের ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৬ নং ওয়ার্ডের বরইতলী, গাছুয়াপাড়া, ফরেস্ট অফিস এলাকায় রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রীনা জানিয়েছেন, পানিতে ডুবে শিশু ইশমামের মৃত্যু হয়েছে। প্রবল বর্ষণ পাহাড়ী ঢলে ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে প্লাবিত হওয়ায় গ্রামীন সড়কগুলোতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বনতলা এলাকায় পাহাড় ধ্বসে জয়নালের ছেলে জাহাঙ্গীরের বসত বাড়ি মাটি চাপা পড়েছে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ১ নং ওয়ার্ডের চরপাড়ায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া দক্ষিণ পাড়া, চৌধুরী পাড়া, সিকদার পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে আরও ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হক জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে ইউনিয়নে পাহাড় ধ্বস, বসত বাড়ি ডুবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১০ টি বসত বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ইউনিয়নের ৭ শতাধিক পরিবার। হিমছড়ি এলাকায় আর্মি ক্যাম্পের উত্তরে পাশে পাহাড় ধ্বসে মেরিন ড্রাইভ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল তাৎক্ষনিক মাটি সরিয়ে সড়কে যানবাহন যোগাযোগ উপযোগি করেন। এছাড়া হিমছড়ি মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশর্^বর্তী করাচিপাড়া এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ইসমাইলের ছেলে নুর কামালের বসত বাড়ি এবং মনসুর আলমের বসত বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধ্বসে চাপা পড়ে নুরুল আলমের বসত ঘর। এতে এসব পাহাড় ধ্বরে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের পূর্ব গোয়ালিয়াপালং এলাকায় পাহাড়ি ঢলে ৫০ টি বসত বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকার গ্রামীন সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ৬ নং ওয়ার্ডের ধোয়াপালংয়ে ৫০ টি বসত বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের পূর্ব ধেছুয়াপালংয়ে ৭০ টি বসত বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া তিনি ঝূঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে অনেক পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে এসেছেন।
রাজারকুল ইউপি চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান জানিয়েছেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির স্রোত ও পাহাড় ধ্বসে ১৫ টি বসত বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৭ টি বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ইউনিয়নের ৩ শতাধিক বসত বাড়ি। ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া, হাজ¦ী পাড়া, ডেইলপাড়া, সিকদার পাড়ার দক্ষিণ অংশ, দেয়াং পাড়া, বড়ুয়া পাড়া, ফরেস্ট অফিস এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশী হয়েছে। এছাড়া পাহাড়তলী, ছাগলিয়াকাটাসহ পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পাহাড় ধ্বসে বসত বাড়ি ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তাও দিচ্ছেন।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানিয়েছেন- পশ্চিম নোনাছড়ি এলাকায় সোনাইছড়ি খালের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাহাড় ধ্বসে পূর্ব নোনাছড়ি-রমনী পাহাড় সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ইউনিয়নের ক্যাজরবিল ও পশ্চিম বোমাংখিল এলাকায় চলাচলের সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৫ নং ওয়ার্ড শাহসুজা সড়কের রাজঘাট অংশ পানিতে ডবে গেছে। ওই এলাকায়ও শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্নস্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ৯ নং ওয়ার্ডের ডেইঙ্গারচরে গ্রামীন সড়ক পানিতে ডুবে গেছে এবং ৫০ টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মো. ইসমাইল নোমান জানিয়েছেন, ইউনিয়নের মৌলভীরকাটা-গর্জনিয়া বাজার সড়ক পানিতে প্লাবিত হওয়ায় চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিতে প্লাবিত হয়েছে হাজীরপাড়া-গর্জনিয়া বাজার সড়ক। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের মৌলভীরকাটা-গর্জনিয়া বাজার সড়ক পানিতে প্লাবিত হওয়ায় চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিতে প্লাবিত হয়েছে হাজীরপাড়া-গর্জনিয়া বাজার সড়ক। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন- কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি ১ হাজার পরিবারের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
সোয়েব সাঈদ, রামু
কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্তের নাফনদী থেকে ছৈয়দুল বশর (২০) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে ...
পাঠকের মতামত