কক্সবাজারের রামু উপজেলার মেরংলোয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আবদুর রহমান মাস্টারের নাম মুছে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকসহ জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন- বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা মরহুম আবদুর রহমান মাস্টারের ছেলে মো. শাহাজান।
অভিযোগকারি মো. শাহাজান জানিয়েছেন- তাঁর পিতা মরহুম আবদুর রহমান মাস্টার এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু স্থানীয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন ও নৈশ প্রহরী রিফাত সম্প্রতি বিদ্যালয় ভবনের বিদ্যালয়ের নামের পাশে থাকা প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা আবদুর রহমান মাস্টারের নামটি রহস্যজনক কারণে মুছে দেন।
মো. শাহাজান আরও জানান- মরহুম আবদুর রহমান মাস্টারের দানকৃত ৬৬ শতক জমিতে মেরংলোয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৬৯ সালের ২৩ আগস্ট ৫৩০৩ নাম্বার দলিলমুলে এ জমি দান করেন। যার আরএস খতিয়ান নাম্বার ৪২৫, বিএস খতিয়ান নাম্বার ২। প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আবদুর রহমান এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেন। ১৯৭৩ সালের দিকে এ বিদ্যালয় সরকারিকরণ হয়। জমি দান ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে আবদুর রহমান মাস্টার বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশ পথের অনেক পূর্বে নির্মিত গেইটে বিদ্যালয়ের নামের পাশে প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা হিসেবে আবদুর রহমান মাস্টারের নাম উল্লেখ ছিলো। কয়েকবছর পূর্বে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকাজের জন্য এ প্রবেশ গেইটটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। নতুন নির্মিত ভবনেও বিদ্যালয়ের নামের পাশে প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা হিসেবে দীর্ঘদিন শোভা পাচ্ছিলো আবদুর রহমান মাস্টারের নাম। শিক্ষার প্রসার ছাড়াও সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডে আবদুর রহমান মাস্টার সবার কাছে স্মরণীয়। তিনি রামুর মেরংলোয়া রহমানিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসারও জমি দাতা এবং এ প্রতিষ্ঠানটি তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া আবদুর রহমান মাস্টার সদর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান (তৎকালীন প্রেসিডেন্ট) ছিলেন।
গত ৮ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দেয়া অভিযোগে মো. শাহাজান উল্লেখ করেছেন, বিদ্যালয়ের বিগত কমিটিতে তাঁর বড় ভাই শামসুল হুদা চৌধুরীর ছেলে মুজিবুর রহমান ৩ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি বিগত সরকার পতনের পর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যেমে বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেন এবং পরবর্তীতে এডহক কমিটি গঠনে চিঠি প্রেরণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধান শিক্ষক আমজান হোসেন তাঁর (মো. শাহাজান) বড় ভাই শামসুল হুদা চৌধুরীর ওয়ারিশগণের নাম দাতা সদস্যগণের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে আবদুর রহমান মাস্টারের ৪ ছেলে ও জমি বিক্রেতাদের নামে ষড়যন্ত্রমূলক নোটিশ ইস্যু করে।
উল্লেখ্য যে, বিগত কমিটির সভাপতি মাষ্টার মুজিবুর রহমানের নাম পর্যন্ত নোটিশ খাতা থেকে বাদ দেন। বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী রিফাতের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও প্রধান শিক্ষক তা এড়িয়ে যান। এসব বিষয়ে বিগত সভাপতি প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরীর অপকর্ম গত ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসারকে লিখিতভাবে অবহিত করেন।মুজিবুর রহমান সভাপতি থাকাকালীন বিদ্যালয়ের নোটিশ ও রেজুলেশন খাতা পর্যালোচনা করলে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এসব অনিয়মে জড়িতদের ইন্ধনে এলাকায় উত্তেজনা ও বিভাজন সৃষ্টি করে রাতের অন্ধকারে প্রধান শিক্ষক, দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী রিফাত ও ইউআরসি পিয়ন দিদারুল আলম বিদ্যালয় ভবনের দেয়াল থেকে দাতা আবদুর রহমানের নাম মুছে দেয়। এর ফলে ১১৬ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয় ও দাতা সদস্যদের পরিবারের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।
সদ্য বিলুপ্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাষ্টার মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠাতা আবদুর রহমান মাস্টারের নাতি। তিনি জানিয়েছেন- তাঁর দাদা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পরবর্তীতে আমৃত্যু পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। দাতা পরিবারের সদস্য হিসেবে আমার বাবা শামসুল হুদা চৌধুরী ও আমার চাচা শাহাজানও সুনামের সহিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এরই সুবাদে দাতা পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এ বিদ্যালয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত ৫৪ বছর প্রতিষ্ঠাতা আবদুর রহমান মাস্টারকে নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠেনি। এমনকি বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে সেই থেকে প্রতিষ্ঠাতা আবদুর রহমান মাস্টারের ছবি টাঙানো রয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং নাম মুছে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেরংলোয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন- গত ৬ অক্টোবর রাতের আঁধারে কে বা কারা বিদ্যালয়ের দেয়াল থেকে আবদুর রহমান মাস্টারের নাম মুছে দিয়েছে। এ নিয়ে রামু উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে তিনি আবারো দাতা হিসেবে আবদুর রহমানের নাম লিখে দিয়েছেন