উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪/০৯/২০২৪ ৯:০৫ এএম

কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালংয়ে মূল সড়ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় এক কিলোমিটার গেলে চোখে পড়বে তিনটি একতলা ভবন। সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘শহীদ এ টি এম জাফর আলম মাল্টি ডিসিপ্লিন একাডেমি। প্রতিষ্ঠাতা: শফিউল আলম’। এই শফিউল আলম আওয়ামী লীগ আমলের অন্যতম একজন দাপুটে আমলা, যিনি দেশের ২১তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণ করা স্থাপনায় প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সরকারের একজন সচিবের নাম কেন– এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ১৫৫ একর জমিতে গড়ে ওঠা ওই কারিগরি প্রশিক্ষণ একাডেমি যাঁর নামে, তিনি শফিউল আলমের ভাই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভাইয়ের নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সংরক্ষিত বনের জমি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। বন আইন, জাতীয় বন নীতি ও আদালতের নির্দেশনা পাশ কাটিয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ওই জমি বরাদ্দ দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।

শফিউল আলম ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। তিনি এই পদে থাকাকালেই তাঁর ভাইয়ের নামে প্রতিষ্ঠান গড়তে বনের এই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, ওই জমি বরাদ্দে তাঁর হস্তক্ষেপ ছিল।

চাকরি থেকে অবসরের পর শফিউল আলম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। শহীদ এ টি এম জাফর আলম মাল্টি ডিসিপ্লিন একাডেমির জমি বরাদ্দ নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে গত ২৫ আগস্ট হোয়াটসঅ্যাপে এ প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে বার্তা পাঠালে তিনি প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। বিদ্যমান বন আইন ও বন নীতি লঙ্ঘন করে কীভাবে ভাইয়ের নামে বনের জমি বরাদ্দ পেয়েছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, জায়গাটি কখনো বনের ছিল না। এটা বিএস, এসএ ও বিএস জরিপে খাসজমি।

শফিউল আলম এ জমি বরাদ্দ নেননি দাবি করে বলেন, ‘জেলা প্রশাসন এ বরাদ্দ নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের নামে জমি আমি বন্দোবস্ত নিইনি। জেলা প্রশাসনের এডিসি (শিক্ষা) আবেদন করেছিলেন এ জমির জন্য। আমার সম্পর্ক শুধু এখানে আমার ভাইয়ের নামের ব্যবহার। আমার পরিবার থেকে তার নাম ব্যবহারের জন্য কোথাও বলিনি। আবার আপত্তিও করিনি।’

শফিউল আলম জমিটি বনের নয় দাবি করলেও বন বিভাগের ডকুমেন্ট বলছে, এ জায়গায় উডলট ও সামাজিক বনায়ন ছিল। তিন দশক আগে এসব বনায়ন করা হয়েছিল।

একাডেমির কেয়ারটেকার স্থানীয় বাসিন্দা সরওয়ার আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখানে একসময় ঘন জঙ্গল ছিল। ছিল নানা ধরনের বন্য প্রাণী। একাডেমি নির্মাণ করার প্রয়োজনে সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। পরে টেন্ডার দিয়ে গাছ বিক্রি করা হয়েছে।

বরাদ্দ দেওয়া বনের অংশটি কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নে। ১৯৩৫ সালে দ্য ক্যালকাটা গ্যাজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বনটিকে প্রোটেক্টেড ফরেস্ট বা রক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। এখানে ৯০ হেক্টর বনভূমিতে বন বিভাগের উডলট ও সামাজিক বনায়ন ছিল। আইনে রক্ষিত বন ‘খাসজমি’ হিসেবে বন্দোবস্ত দেওয়া যায় না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জায়গাটি আমাদের কি না, সেটা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। কাগজপত্র দেখে বলতে হবে।’ পরে তাঁকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ধরেননি।

বনের ওই জমির বরাদ্দ বাতিলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২৪ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। এ বরাদ্দকে আইনবহির্ভূত অভিহিত করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে বনের জমি বরাদ্দ দেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধও জানানো হয় ভূমি মন্ত্রণালয়কে। এর আগে পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন সময়ে তিনবার চিঠি দেওয়া হলেও বরাদ্দ বাতিল করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এভাবে বনের জমি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়ার সুযোগ নেই। এ বরাদ্দ প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নেবে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় বন নীতির ১৯ নম্বর ঘোষণায় বলা আছে, সরকারি মালিকানাধীন বনভূমি বনায়ন ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে সরকারপ্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে বনায়নবহির্ভূত কাজে ব্যবহার করা যাবে।

বন আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী, রক্ষিত হিসেবে ঘোষিত বনভূমি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এক স্মারকে বনভূমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দোবস্ত না দেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়.।সুত্র: দৈনিক আজকের পত্রিকা

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির বুলেটপ্রুফ গাড়িতে টহল

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্টে মরিয়া হয়ে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আর চোরাচালান বন্ধে ...