সোয়েব সাঈদ, রামু
প্রকাশিত: ২৬/১০/২০২৩ ৩:৩০ পিএম

“১০ টাকার হাট”, এই বিশেষ বাজারে প্রতি কেজি চাল ১ টাকা, প্রতি কেজি ডাল ২ টাকা, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৩ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৩ টাকা, প্রতি কেজি আটা ১ টাকা, প্রতি কেজি সুজি ১ টাকা, প্রতিটি লাউ ও মিষ্টি কুমড়া ১ টাকা, ডিম দুই হালি ১ টাকা, এংকর ডাল ১ টাকা হয়েছে। এক টাকায় মিলেছে নতুন পোষাক কেনারও সুযোগ। যেখানে ছিলো লুঙ্গি, থামি, শার্ট, টি শার্ট, ফ্রক, স্যান্ডেল সহ নানা পণ্য। এভাবে নামমাত্র মূল্যে কাপড় সহ প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পেরে উৎফুল্ল সুবিধাবঞ্চিত আড়াইশ বৌদ্ধ পরিবার। প্রতিটি পরিবার সর্বোচ্চ দশ টাকার পণ্য কেনার সুযোগ পেয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।
বৌদ্ধধর্মালম্বীদের আসন্ন প্রবারনা উৎসবে অনেক দরিদ্র পরিবারে নেই উৎসবের আমেজ। তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চ্যারিটি প্রজেক্ট ‘১০ টাকার হাট’। বৃহষ্পতিবার, ২৬ অক্টোবর কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের রামকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার ও জগৎজ্যোতি চিলড্রেন ওয়েলফেয়ার হোম মাঠে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ সুপারশপ মুখরিত হয়ে উঠে কেনাকাটায়।
সকাল ১০ টায় গরীবের সুপার শপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা। তিনি বলেন- বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এ এলাকায় এসে সেবার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। এ কার্যক্রমের ফলে এখানকার দরিদ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায় উৎসব-আমেজে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করবে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন জানালেন- আর কদিন পরেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হবে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ খুব দুর্দশার মধ্যে আছে। এর ছাপ পড়েছে এখানকার সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোতে। তাদের উৎসবকে রাঙিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ‘১০ টাকার হাট’ আয়োজন করেছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ মোবারক বাবু জানান- আয়োজনটি রামুর রাজারকুলে হলেও দূরের এলাকা থেকে দুঃস্থ পরিবারগুলো এসে কেনাকাটা করার সুযোগ পেয়েছে। এজন্য যাতায়াত সুবিধা দিতে বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে বিশেষ যাতায়াত সার্ভিস চালু করায় কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী রাখাইন পল্লী, রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের পানেরছড়া রাখাইন পল্লীর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও এখানে কেনাকাটার সুযোগ পেয়েছে।
তাঁরা আরো জানান- বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা ঘরে ঘরে জরিপ করে টোকেন প্রদান করেন। যা দেখিয়ে এ সুপার শপে পণ্য কেনার সুবিধা দেয়া হয়েছে। মূলত পণ্য বাছাই করার স্বাধীনতা দেয়ার পাশাপাশি দরিদ্র মানুষকে উৎসবের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা দিতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এমন উদ্যোগ নিয়েছে। কেবল প্রবারনা পূর্ণিমা নয়, মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব ঈদ এবং চলমান দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যেও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নানা কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
“১০ টাকার হাট” উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, রামকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রী জ্যোতিসেন ভিক্ষু, রামু প্রেস ক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়–য়া ও রামু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি পলক বড়–য়া আপ্পু।

পাঠকের মতামত