রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া সড়কে ৩ দিন ধরে সরাসরি সিএনজি চলাচল বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কের নাইক্ষ্যংছড়ি স্টেশনে একটি পরিবহন সংগঠনের নামে চালক-শ্রমিকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা, মারধর ও গাড়ি ভাংচুর করে আসছে। একারণে ওই সড়কে ক্ষুব্দ সিএনজি চালকরা নাইক্ষ্যংছড়ি অংশে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এরফলে এ সড়কে চলাচলকারি হাজার হাজার যাত্রীদের অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রামু উপজেলা সিএনজি চালক শ্রমিক সমবায় সমিতির আওতাধিন গাড়িগুলো কেবলমাত্র এ সড়কের রামু উপজেলার অংশে এবং নাইক্ষ্যছড়ি সিএনজি অটোরিক্সা চালক শ্রমিক সমিতির গাড়িগুলো সড়কের নাইক্ষ্যংছড়ি অংশ চলাচল করছে। এ কারণে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দুটি সীমান্তবর্তী জারুললিয়াছড়ি ও অপরপ্রান্তের ভাঙ্গা ব্রীজ অংশে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দূর্ভোগের শিকার যাত্রীরা জানান, পাহাড়ী ও দূর্গম অঞ্চল হওয়ায় এ সড়কে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস চলাচল করেনা। তাই হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা অটোরিক্সা সিএনজি। এ কারণে দুটি পরিবহন সংগঠনের রশি টানাটানি সত্ত্বেও যাত্রীরা সিএনজিতে চলাচলে বাধ্য হচ্ছে। তাও আবার ৩ দিন ধরে সড়কের দুটি স্থানে গাড়ি পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এসুযোগে চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করছে।
এছাড়াও ৩ দিন ধরে সীমান্ত জনপদের ব্যস্ততম এ সড়কে সিএনজি যাত্রীরা অবর্ণনীয় দূর্ভোগের শিকার হলেও রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা জনপ্রতিনিধির কোন হস্তক্ষেপ চোখে পড়েনি। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
কক্সবাজার জেলা অটোরিক্সা সিএনজি টেম্পো সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন রামু শাখার সভাপতি মুজিবুল হক ভূট্টো জানিয়েছেন, ৩০ বছর ধরে এ সড়কে তাদের আওতায় অটোরিক্সা সিএনজি লাইন চালু রয়েছে। রামু থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে গর্জনিয়া পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা অংশ রয়েছে মাত্র ২ কিলোমিটার সড়ক। এ দুই কিলোমিটার সড়কে কয়েকবছর ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির একটি চক্র পরিবহন সংগঠনের নাম দিয়ে রামুর সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চাঁদা না দিলে প্রায় সময় চালক-শ্রমিক ও লাইন পরিচালনায় দায়িত্বরতদের মারধর ও গাড়ি ভাংচুর করে। এ নিয়ে কক্সবাজার জেলা অটোরিক্সা সিএনজি টেম্পো সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের একাধিক বৈঠকে সমঝোতা হলেও নাইক্ষ্যংছড়ির কথিত পরিবহন নেতারা তা ফের অমান্য করে চালক-শ্রমিকদের হয়রানি করে আসছে। এ নৈরাজ্য বন্ধ না করলে কক্সবাজার জেলা অটোরিক্সা সিএনজি টেম্পো সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন রামু শাখার নেতৃবৃন্দ অচিরেই এ সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষনা দেবে।
তিনি আরও জানান- একমাস পূর্বে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া দুটি পরিবহন সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করেন। ওইসময় লিখিত সিদ্ধান্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়াসহ রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির পরিবহন নেতারা স্বাক্ষর করেন। কিন্তু একমাস না যেতেই আবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পরিবহন নেতারা উপজেলা প্রশাসনের বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত অমান্য করে চাঁদার দাবিতে রামুর সিএনজি চালকদের মারধর ও গাড়ি ভাংচুর। এ কারণে বাধ্য হয়ে গত ৫ মে থেকে রামুর সিএনজি চালকরা রামু হতে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের জারুলিয়াছড়ি সড়ক পর্যন্ত এবং অপরপ্রান্তে নাইক্ষ্যংড়ি সীমান্তের ভাঙ্গা ব্রীজ হতে গর্জনিয়া বাজার পর্যন্ত চলাচল করছে।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের দাবি, রামুর সিএনজি সংগঠনের নেতারা নাইক্ষ্যংছড়িতে গিয়ে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করায় এ দ্ধন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রশাসন যে কোন সিদ্ধান্ত দিলে তারা মেনে নেবেন বলে জানান। তবে ইতিপূর্বে প্রশাসনের লিখিত সিদ্ধান্ত অমান্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অন্য উপজেলায় অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি ওই সড়ক দিয়ে আসার সময় জারুলিয়াছড়ি এলাকায় বিষয়টি দেখেছেন। এ নিয়ে তিনি নিজেও অত্যন্ত বিব্রত। নিজেদের উদ্যোগে সহসা এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য তিনি উভয় সংগঠনের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যতায় তিনি এ ব্যাপারে কঠোর প্রদক্ষেপ নেবেন।
রামুর গর্জনিয়া এলাকার ফাতেমা বেগম ও আরেফা আকতার জানিয়েছেন, তারা রোগী নিয়ে কক্সবাজার থেকে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তবর্তী জারুলিয়াছড়ি সেতুর পাশে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে এখন হেঁটে গিয়ে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর আবারো অন্য একটি গাড়ি বেশী ভাড়া দিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি যেতে হচ্ছে। এরপর নাকি আবারো নামিয়ে দেবে। এভাবে চলাচল করা মানে মানুষের উপর জুলুম করা হয়। কেন এমন হচ্ছে তারা জানেন না। তারা আশা করেনম অন্য কোন মানুষ যেন এ ধরনের হয়রানির শিকার না হয়।
সিএনজি যাত্রী মো. জাকারিয়া জানান, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সিএনজি। কিন্তু দুই উপজেলার সিএনজি সমিতির নেতারা প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে চাঁদা আদায়ের বিষয় নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। আর এই সংঘাত ও নৈরাজ্যের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রিদের। গত তিনদিন ধরে রামু -নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে দুইগ্রুপ চরম নৈরাজ্যে লিপ্ত হয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে মাঝ পথে। আবার বাড়তি ভাড়া দিয়ে দফায় দফায় অন্য গাড়িতে করে যেতে হচ্ছে। এসব দেখার যেন কেউ নাই, মনে হচ্ছে, প্রশাসনও এসব সংগঠনের ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে।