তোফায়েল আহমদ ♦
নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি-একজন সংবাদকর্মী যেখানেই যান সেখানে ভুরি ভুরি সামাজিক সমস্যার কথা শুনতে হয়। সমাজে সমস্যা থাকবেই। এলাকাতো সমস্যায় থাকে হাবুডুবু। এ জন্য দাবী-দাওয়ারও যেন শেষ থাকেনা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে-যেখানে একটি দেশের সরকার প্রধান আসছেন সেখানে কোন বড় ধরণের সমস্যাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সমস্যার অভাবে উদ্ভব হচ্ছে না কোন দাবী-দাওয়ারও।
আগামীকাল শনিবার কক্সবাজারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এবারো একে একে ১৬ টি প্রকল্পের উদ্ভোধন এবং ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। শনিবার প্রধানমন্ত্রী সাগর পাড়ের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দিবেন। জনসভায় বক্তৃতা করবেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। নেতারা রাজনীতি করেন এলাকার মানুষের জন্য। এলাকার সমস্যাদির কথা যদি কিনা নেত্রীকে বলা না যায় তাহলে নেতৃবৃন্দের রাজনীতিইতো থাকে না। তাই গত ক’দিন ধরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সন্ধানে নামেন সমস্যাদির।
সেই সব সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে অন্তত তা সমাধানের বক্তৃতা করবেন নেতৃবৃন্দ। কিন্তু দাবী কি করা যায় ? এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তারও যেন শেষ নেই। জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে আলাপ করেছি। তারা একবাক্যে বলেছেন-ভাই না চাইতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবকিছু দিয়ে দিয়েছেন। এখন আমাদের এমন কোন অভাব নেই-যেটা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দাঁড়িয়ে দাবী তুলে ওনার প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় প্রহর গুনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের চেয়েও কক্সবাজারের হাঁড়ির খবর বেশী জানেন। একারনেই ওনার সামনে যেমন-তেমন দাবী-দাওয়ার কথা বলে বিব্রত হতে চাইনা।
আমি একজন সংবাদকর্মী হিসাবে আমার যেটা জানার ছিল সেটাও গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার করেছেন-কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক শামীম ও স্থানীয় এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। জানতে চেয়েছিলাম সোনদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরটি আদৌ হবে কিনা ? কেননা ইতিমধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপ ও ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৯ হাজার একর খাস জমি হস্তান্তর করা হয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর অনুকুলে। বেজা সেখানে ইকিু ট্যুরিজম করবে। আমার প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ নিশ্চিত করেন যে-গভীর সমুদ্র বন্দর অবশ্যই হবে মহেশখালী দ্বীপে।
গতকাল কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজমের কক্ষে আলাপ হচ্ছিল পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর সোলেমানের সাথে। তিনি বেশ ক’বছর আগে সদর থানায় ছিলেন। বর্তমানে লক্ষীপুরে রয়েছেন। শনিবারের প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ডিউটিতে এসেছেন। তিনি জানালেন-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মাত্র একবারই লক্ষীপুর জেলা সফর করেছেন।
অথচ কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর এটি পঞ্চমবারের সফর। এবারের সফরেও ১৬ টি প্রকল্পের উদ্ভোধন করা হচ্ছে। এর আগেও যতবার কক্সবাজার এসেছেন ততবারই নিশ্চয় এরকম প্রকল্পের উদ্ভোধন করেছেন।
লক্ষীপুর থেকে কক্সবাজার আসা পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর সোলেমান বলেন-প্রধানমন্ত্রী লক্ষীপুরে একবার গিয়ে হয়তোবা একবারেই ১৬ টি প্রকল্পের উদ্ভোধন করেছেন। অথচ কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী এরকম পাঁচ বারে কতগুলো প্রকল্প দিয়েছেন ? তাও কেবল লাখ বা কোটি টাকার প্রকল্পতো নয়। একেবারে হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প।
এমনকি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেগা প্রকল্পটিও কক্সবাজারে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে চল্লিশ হাজার কোটি টাকার কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প ইতিমধ্যে বদলে দিয়েছে দ্বীপের চেহারাও। আজ থেকে ২৬ বছর আগে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের শতাব্দীর ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে মাতারবাড়ী-ধলঘাটার সেই লন্ডভন্ড চেহারা বদলে গেছে। দীর্ঘ ২৬ বছর পর সেই মাতারবাড়ী গিয়ে দেখে এসেছি-মাতরাবাড়ীর যে লবণ মাঠে সেই রাতে ২৫ ফুট জলোচ্ছাসের পানি মরণ থাবা দিয়েছিল সেই লবণ মাঠেই এখন ‘আলোর চাষ’ (বিদ্যুৎ প্রকল্প) হচ্ছে। সেখানকার লোকে বলে-‘ ইয়ান বাজি শেখের মাইয়ার কেরামতি।’
লেখক-
তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজারে কর্মরত দৈনিক কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার এবং আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও বিবিসি’র স্ট্রিঙ্গার।