নরসিংদী: গুলশান হামলায় জড়িত সন্দেহে ‘আটক’ রুমা আক্তার তিন মাস আগে দুবাই থেকে ফিরেছেন বলে পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের চরখুপি গ্রাম থেকে রুমাকে আটক করা হয়। তবে রুমা জঙ্গি নয়, মানসিক ভারসাম্যহীন।
রুমা আক্তার (২৮) নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুরের সুলতানপুরের সাহাবদ্দীন আহমেদ ওরফে বদুর মেয়ে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের চরখুপি গ্রামের এক স্বজনের বাড়ি থেকে রুমাকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের।
শিবপুর থানার ওসি খোন্দাকার ইমাম হোসেন বলেন, তিনি লোক মুখে শুনেছেন ওই গ্রাম থেকে রুমা নামে এক নারীকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে।
তবে কী কারণে তাকে ‘আটক’ করা হয় সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান ওসি খোন্দাকার ইমাম হোসেন।
তিনি বলেন, রুমাকে আটকে শিবপুর থানা পুলিশ সম্পৃক্ত ছিল না। তার পরিবারসহ স্থানীয় কেউ জানে না তাকে কেন আটক করা হয়েছে।
রুমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শাহাবদ্দিন বদু জানান, তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে রুমা সবার ছোট। রুমার দুটি বিয়ে হয়েছে। প্রথম বিয়ে হয় শিবপুরের সিএন্ডবি গ্রামের রাসেল মিয়ার সঙ্গে। ওই সংসারে রুমার একটি ছেলে (১০) রয়েছে। পরে বিয়ে হয় নোয়াখালীর এক ছেলের সঙ্গে। দ্বিতীয় স্বামীর আগেরও স্ত্রী-সন্তান থাকায় এলাকাবাসীর চাপে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
“ছয় মাস আগে চাকরির সুবাদে রুমা দুবাই চলে যায়। সেখানে তিন মাস থেকে ফিরে আসে। এরপর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে।”
“দেশে ফিরে আসার পর সে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলত এবং পাগলের মতো চলাফেরা করত।”
ভিক্ষাবৃত্তিসহ মানুষের কাছ থেকে একশ/দুশ করে টাকা চেয়ে নিত, বলেন শাহাবুদ্দিন।
শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, গুলশান ঘটনার দুই দিন পর রুমা শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের চরখুপি গ্রামে তার ভগ্নিপতি চা বিক্রেতা তারা মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
“বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়।”
রুমার মেজ বোন সাবিনা আক্তার সাথী বলেন, রুমা ভিক্ষা করত, বিভিন্ন বাসায় কাজ করত। তার মানসিক সমস্যা ছিল। এ কারণে তাকে ইতিপূর্বে ডাক্তারও দেখানো হয়েছিল।
“সে ৩/৪ মাসের ওষুধ একসাথে খেয়ে ফেলত এবং ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করত।”
বিশ্বজুড়ে আলোচিত গুলশান হামলার ছায়াতদন্তকারী র্যাব একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওচিত্রে সন্দেহভাজন চারজনকে শনাক্তের কথা র্যাব জানিয়েছিল, যার মধ্যে ব্যাগ কাঁধে সালোয়ার-কামিজ পরা এক নারীকেও দেখা যায়।
গত ১ জুলাই রাতে একদল জঙ্গি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ছয় হামলাকারী নিহত হওয়ার তথ্য জানায়।
হামলাকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য গিয়াসউদ্দিন আহসান, তার ভাগ্নে, তার বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক এবং শেওড়াপাড়ার একটি বাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গুলশানের ওই ক্যাফে থেকে উদ্ধার জিম্মিদের মধ্যে হাসনাত রেজাউল করিম এবং তাহমিদ হাসিব খানকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে তারা নিখোঁজ।
পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে বললেও তারা এখনও বাড়ি না ফেরায় উদ্বেগ জানিয়ে আসছে তাদের পরিবার।a