ছাত্রীদের আবাসিক হলের রুম দখল করতে গিয়ে রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার শেলী মারামারিতে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৩ জুন) রাত সাড়ে আটটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
এ সময় শেলী ও তার কর্মী-সমর্থকদের হামলায় নতুন হলের (ফাতেমা হল) দুই আবাসিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। আহত দুই শিক্ষার্থীর নাম নুসরাত জাহান বাঁধন এবং তাসনুবা তাবাসুম মৌ। আহত দুইজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে৷
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শেলী তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সিট দখলের উদ্দেশ্যে নতুন হলের ৩০১২, ৩০০১নং কক্ষে হামলা চালায়৷ এতে নুসরাত জাহান বাঁধন এবং তাসনুবা তাবাসুম মৌ বাধা দিলে মারামারির সূত্রপাত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুন নতুন হলে থাকেন আর সভাপতি সেলীনা আক্তার শেলী থাকেন পুরাতন হলে৷ কিছুদিন আগে নতুন কমিটি ঘোষণার পর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শেলী নতুন হলের সিট দখলে নেওয়ার চেষ্টা ও বৈধ মেয়েদের সিটের জন্য চাঁদা দাবি করে আসছিলেন৷ আজ হঠাৎ কয়েকটি কক্ষে দলবল নিয়ে হামলা করে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতেই মূলত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থী বাঁধনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে
মারধরে আহত শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বাঁধন বলেন, কমিটির পর আমাদের নাকি হলে থাকতে দিবে না৷ আমার রুমে এসে সভাপতি শেলী আপুসহ অন্যান্যরা অতর্কিত হামলা করেছেন৷ আমার চুল টেনে ধরে কিল, ঘুষি দিয়েছেন৷ আমার পাশের রুমের মেয়েরা অনেক চেষ্টা করছে আমাকে রক্ষা করতে তারপরও আমাকে অনেক মেরেছেন৷ প্রথম হামলা করেছেন সভাপতি৷ আমি ভয়ে আছি। এই ঘটনার বিচার চাই৷
আহত শিক্ষার্থী বাঁধনের বড় ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার বোন বিকালে ফোন করে বলছে তাকে সভাপতি শেলী প্রায় হুমকি দেয়, সিট নিয়ে ঝামেলা করে, সিটের জন্য চাঁদা চায়৷ সন্ধ্যায় তার রুমে দলবল নিয়ে এসে হামলা চালায়৷ এখন বোনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসছি৷ সে খুব অসুস্থ৷
এ বিষয়ে জানতে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, কিছুই হয়নি, কোন সমস্যা নেই। সব ঠিক হয়ে গেছে।
এরপর তিনি ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে আরও কয়েকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার শেলী বলেন, বাঁধনকে মারধর করা হয়নি। পুলিশ আসার পর সে দিব্যি হেঁটে হাসপাতালে চলে গেছে।
তিনি বলেন, আমি নতুন সভাপতি হয়েছি। সেজন্য ১০-১৫ জন মেয়ে নিয়ে সেক্রেটারি ব্লক পরিদর্শনে যাই। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু তৃতীয় তলায় গেলে বাঁধন বলে, এই মুহূর্তে যেহেতু সেক্রেটারি নেই, কোনো সভাপতি মানি না।
তিনি আরও বলেন, আমি সবসময় হিজাব পরি। বাঁধন আমার হিজাব ধরে টান দেওয়ায় সেটা খুলে যায়। এরপর কয়েকজন মেয়ে আমাকে সরিয়ে নিয়ে এসেছে।
তবে বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, ঝামেলা হয়েছিল৷ আমরা ছিলাম সেখানে৷ কলেজ প্রিন্সিপাল, হলের সুপার সবাই ছিলেন৷ এখন মিটমাট হয়ে গেছে৷ এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসের ১৩ তারিখ (শুক্রবার) বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে৷ এতে সভাপতি হিসেবে সেলিনা আক্তার শেলী এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাবীবা আক্তার সাইমুন দায়িত্ব পান৷
কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আখিনুর আক্তার অনু, রিমা আফরিন, মারুফা আক্তার শ্রাবনী ও মোছা. খাদিজা ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়৷