চলতি মৌসুমে ভ্রমণপিপাসুরা রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া যেতে পারবেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের পরিবেশ অনুকূলে আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করেছে প্রশাসনের একটি দল। পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পরীক্ষামূলক চালু হচ্ছে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল। তবে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী পরিবহন করলে আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন জেলা প্রশাসন।
দীর্ঘ ৬ মাস পর শুরু হতে যাচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল। তাই মঙ্গলবার সকালে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের পরিবেশ অনুকূলে আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে সেন্টমার্টিনে যান প্রশাসনের একটি দল। সকাল ১০টার দিকে টেকনাফের দমদমিয়া জেটি থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এফবি ‘বার আউলিয়া’ জাহাজটি। এ সময় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. নাসিম আহমেদের নেতৃত্বে পর্যবেক্ষণ দলে ছিলেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব রায়হান উদ্দিন আহমেদ, পর্যটন উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইসলাম তোহা, ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, সী-ক্রোজ অপারেটর অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুরসহ শতাধিক ব্যক্তি।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজটি ছেড়ে যাবে। আবার দুপুর আড়াইটার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর বিকেলে টেকনাফ জেটিঘাটে পৌছায় দলটি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. নাসিম আহমেদ বলেন, নৌপথ পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের দল নিয়ে সেন্টমার্টিনে যায়। এ সময় উভয় পাড়ের জেটিঘাট, নাফ নদীর নাব্যসহ আনুষঙ্গিক নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হয়। কোথাও কোন ধরণের সমস্যা পাওয়া যায়নি। আর সেন্টমার্টিনের জেটি দিয়ে পর্যটকদের উঠা-নামার জন্য আরও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সিদ্ধান্ত হয়। এসময় সভায় উপস্থিত থেকে মতামত ব্যস্ত করেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. নাসিম আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. মিজানুর রহমান, ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার শেহরিন আলম ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পরে বৈঠক শেষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটকবাহি জাহাজ বার আউলিয়াকে এক সপ্তাহের জন্য পরীক্ষামূলক চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি আবহাওয়া পরিস্থিতি অনূকূলে না থাকে বা সংকেত দেয় সেক্ষেত্রে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। এখন পর্যন্ত একটি জাহাজ অনুমতি দেয়া হয়েছে, বাকিদেরও অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে সভায় সিদ্ধান্তক্রমে চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে।
মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কোনোভাবেই ধারণ ক্ষমতা অধিক যাত্রী জাহাজে উঠানো যাবে না। যদি ধারণ ক্ষমতা অধিক যাত্রী জাহাজে তোলা হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার শেহরিন আলম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পর্যটকরা টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তায় কাজ করবে।
আর জাহাজ কর্তৃপক্ষ বলছে, আগের নিয়মে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল করবে।
সী-ক্রোজ অপারেটর অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, আগের নিয়ে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবে। এখন টেকনাফ থেকে একটি জাহাজ প্রতিদিনই চলাচল করবে এবং আরেকটি জাহাজ হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে অনুমতি পেলে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন চলাচল শুরু করবে। আর ‘নাফ নদীতে নাব্যসংকট ও একাধিক বালুচর জেগে ওঠায় গত বছর পর্যটন মৌসুমের শুরু থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। এ বছর যথাসময়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি পাওয়ায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, কেয়ারি সিন্দবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, আটলান্টিক, শহীদ আব্দুস সালাম, এমভি পারিজাত, এমভি রাজ হংস, সুকান্ত বাবু, এমভি বে ক্রুজ এবং এমভি বার আউলিয়া জাহাজ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচল করত।