২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নেয় কক্সবাজারে। বাংলাদেশের ওপর বোঝা হয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করতে বিশ্বব্যাংকের অনুদানে একটি প্রকল্প চালু করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ৩৩৭ কোটি টাকায় শুরু হওয়া প্রকল্পটি কয়েক ধাপে ব্যয় বাড়ার পর এখন আবার ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি বেড়ে ৬৯৯ কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, আগামী ২৫ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। প্রকল্পটির ৯০ ভাগ অগ্রগতির পর রোহিঙ্গা প্রকল্পে অনুদান বাড়িয়েছে বিশ্বব্যাংক।
ঝুঁকিপূর্ণ যুব ও নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে (ডিআরপি) উৎপাদনশীল কাজে সরাসরি নিয়োজিত করে ক্যাম্পের বিদ্যমান সেবাগুলোর মান বৃদ্ধি, মৌলিক সুবিধাদি-পরিষেবা সম্প্রসারণ, সামাজিক স্থিতির মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ওয়ার্ক অ্যান্ড সার্ভিস সাপোর্ট কার্যক্রমগুলো জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের (আইডিএ) যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি একনেকে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর অনুমোদিত হয়।
আলোচ্য প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যংকের (আইডিএ) সঙ্গে একটি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে মোট ২ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার (৩৩৪ কোটি টাকা) অনুদান সহায়তা দেওয়া হয়। পরে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত বিশ্বব্যাংকের সেকেন্ড অ্যাডিশনাল ফাইন্যান্সিং চুক্তির আওতায় আরও ২ কোটি ১৯ লাখ ডলারসহ ৫৯৫ কোটি টাকা অনুদান সহায়তা পাওয়া যায়। এরপর ২০২২ সালের নভেম্বরে আরেকটি চুক্তির আওতায় বিশ্বব্যাংক অতিরিক্ত ১০ লাখ ডলার (১৪ দশমিক ৫২ কোটি টাকা) পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রকল্প অনুদান হিসেবে প্রদান করেছে।
সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে আরেক চুক্তির আওতায় বিশ্বব্যাংক অতিরিক্ত ১ কোটি ১৫ লাখ ডলার (১৬৭ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা) পরিচালন ও উন্নয়নব্যয় নির্বাহের জন্য প্রকল্প অনুদান হিসেবে প্রদান করেছে। অনুদান চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে প্রকল্প অনুদান বাবদ প্রাপ্ত ১৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অন্তর্ভুক্ত করে এবং জিওবি খাতের ৩ কোটি টাকা কমিয়ে মোট ৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবে একটি নতুন আইটেম হিসেবে সম্মানী খাত অন্তর্ভুক্তি এবং আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের উল্লেখযোগ্য কারণ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় বলছে, বিশ্বব্যাংকের (আইডিএ) অতিরিক্ত ১ কোটি ১৫ লাখ ডলার (১৬৭ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা) প্রাপ্তির সমন্বয় করে ক্যাম্পে শ্রমঘন পূর্তকাজ যেমন বৃক্ষ ও ঘাস রোপণ, পায়ে চলা পথ, ড্রেনেজ, সাঁকো নির্মাণ, পুনর্বাসন ও সংরক্ষণকাজসহ উপ-প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতামূলক নতুন কাজ (মাদক, জন্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এইচআইডি প্রতিরোধী ক্যাম্পেইন, পরিবেশ সচেতনতা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
এ ছাড়া জিওবি খাতে বরাদ্দ করা ৪ কোটি ২০ লাখের মধ্যে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা কমিয়ে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা সংস্থানের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প অনুদানবাবদ প্রাপ্ত ১৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অন্তর্ভুক্ত করে এবং জিওবি খাতের ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা কমিয়ে ৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রকল্পব্যয় বৃদ্ধিপূর্বক ৬৯৯ কোটি টাকায় দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিছু খাতে ব্যয় কমিয়ে আবার কিছু নতুন খাত যুক্ত করা হয়েছে প্রকল্পে। প্রকল্পে উল্লিখিত ৩১টি খাতে ২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে ১২টি খাতের পরিচালনব্যয় ১২৮ কোটি ৪৪ লাখ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয়-সমন্বয় করে প্রকল্পের ব্যয় ৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে এ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আনুমানিক ১২ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় স্থাপিত ক্যাম্পে বসতি স্থাপন করেছে। তাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক তরুণ ও যুবক রয়েছেন, যাদের কোনো উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করতে না পারলে বিভিন্ন বিপথগামী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। ডিআরপিদের উৎপাদনশীল কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিদ্যমান মৌলিক সুবিধা/সেবার মান উন্নয়ন, সামাজিক ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের (আইডিএ) যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি একনেকে ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকট ব্যবস্থাপনা এবং সেবাদানে সম্পৃক্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ, মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এ প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য