উখিয়া নিউজ ডেস্ক :
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা শরণার্থী রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে আড়াইশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এ অর্থ দিয়ে মিয়ানমারের এসব মুসলিম নাগরিকদের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পুরো অর্থ অনুদান হিসেবে দেবে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘মানবিক সহায়তা ও সচেতনতা কর্মসূচি, কক্সবাজার’ শীর্ষক এক প্রকল্পের মাধ্যমে এদেশে আসা অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা মেটানো হবে। আগামী দুই বছরব্যাপী এ কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ২৩৪ কোটি টাকা, যার পুরোটাই দেবে আইওএম। ইতোমধ্যে অনুমোদনের আগেই প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় বিশুদ্ধ ও সুপেয় খাবার পানি সরবরাহে গভীর নলকূপ স্থাপন, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক উৎসের পানির সংরক্ষণ, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রাকৃতিক উৎসের পানি বিশুদ্ধ করে খাবার ও ব্যবহার উপযোগী করা। এছাড়া তারা স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে পরামর্শ এবং সেবা পাবেন। আবার এসব কার্যক্রম নজরদারিতে এনজিওগুলোর প্রশাসনিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক উল ইসলাম বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জরুরি। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত প্রকল্প প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ চলছে। এটি অনুমোদনের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে মিয়ানমার শরণার্থী ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে একটি কৌশলপত্র অনুমোদিত হয়। এর আলোকে তাদের মানবিক সহায়তায় প্রয়োজনীয়তার কথা আইওএমকে জানানো হয়। এতে অর্থায়নে সম্মত হয় আইওএম।এ লক্ষ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে আইওএম এবং সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে প্রথমে ১৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দিতে সম্মত হয় আইওএম। পরবর্তীতে সংস্থাটি এদেশে আশ্রিত এসব অভিবাসীর অবস্থার কথা বিবেচনা করে অনুদানের অর্থ বাড়িয়ে ২৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকায় উন্নীত করে।উল্লেখ্য, পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বেশিরভাগ রোহিঙ্গার বাস। স্থল ও জলপথে মিয়নামার থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারেই অনুপ্রবেশ করে তারা। পরে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। জন্মস্থানে জায়গা না পাওয়া এসব মিয়ানমার নাগরিক কয়েক যুগ ধরে এদেশে বসবাস করছেন। নিজ দেশে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গারা এ দেশে আসতে শুরু করে। মাঝে মাঝে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত নেয়া হলেও ২০০৫ সালে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।শরণার্থীর জীবন হওয়ায় মানবিক বিভিন্ন সুযোগ থেকেও তারা অনেক সময় বঞ্চিত হন। আইওএম সূত্র মতে, দেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ৩২ হাজার ৪০০। দুটি শরণার্থী শিবিরে গত প্রায় দু দশকের বেশি সময় ধরে বাস করছেন তারা। আর অবৈধ রোহিঙ্গাদের সংখ্যা তিন-পাঁচ লাখ। এ বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে বসবাস করছেন।