মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগকে মিথ্যা উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন বৌদ্ধ রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) প্রধান মেজর জেনারেল তুন মিয়াত নাঈং। মিয়ানমার-বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যু ১৯৫০ সাল থেকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
তুন মিয়াত নাঈং বলেন, বুথিডং ও মংডুতে সম্প্রতি সংঘাত ও সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। যেখানে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে, এই অভিযোগগুলো মিথ্যা ও কোনও প্রমাণ নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু হওয়া জাতিগত দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এই অভিযোগগুলো আসছে, যা ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে প্ররোচিত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ১৯৫০-এর দশকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উ নু রাজনৈতিকভাবে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা রাখাইন অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছিল। বর্তমানে, জান্তা সরকার এই উত্তেজনাকে আরও উসকে দিচ্ছে, মুসলিম গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।
তুন মিয়াত নাঈং বলেন, আমরা পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহ করেছি যা রোহিঙ্গাদের প্রতি অস্ত্র সরবরাহ ও সহিংসতার দায় বর্তায় জান্তা বাহিনীর ওপর। তবে, আমরা কিছু প্রমাণ যুদ্ধের কৌশলগত কারণে আপাতত প্রকাশ করতে পারছি না।
আরাকান আর্মির প্রধানের মতে, রাখাইন রাজ্যে জাতিগত ও ধর্মীয় দ্বন্দ্বকে সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। তবে, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো রাখাইন অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহল থেকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও, তুন মিয়াত নাঈং জোর দিয়ে বলেছেন যে, তারা কোনও ধরনের জাতিগত বা ধর্মীয় সংঘাত উসকে দেয়নি, বরং স্থানীয় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ওপর জোর দিয়েছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে একটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান দাবি করেছেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে তাদের লড়াই করতে হচ্ছে। সেনাবাহিনীও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। ফলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অলিখিত সমঝোতা হয়েছে, তারা একে অপরকে আক্রমণ করছে না।
এর আগে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, জোর করে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাধ্য করছে সেনাবাহিনী। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার