মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গারা তাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এরমধ্য দিয়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ যেমন সীমিত হয়ে যাবে, তেমন ভাবে ক্যাম্পের ভেতর ও আশপাশের এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দ্বন্ধও বাড়তে পারে। যা মারাত্মক প্রভাব পরবে আশ্রয় জীবনে।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (WFP) বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে প্রতি ব্যক্তিকে মাসে ৬ ডলার পরিমাণ রেশন দেওয়া হবে।
বর্তমানে রোহিঙ্গারা মাথাপিছু ১২.৫০ ডলার খাদ্য সহায়তা পান, কিন্তু তহবিলের অভাবে এই পরিমাণ ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হবে আগামী মাস থেকে।
বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে বলছেন, এই সিদ্ধান্ত আশ্রয় শিবিরে খাদ্য সংকট ও অপুষ্টি আরো বৃদ্ধি করবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, “ খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে নেমে আসার এই সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের প্রভাব পরবে। আশ্রিতরা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে।”
এতে করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কাও করেন সামসুদ্দৌজা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ARSPHR)-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, “রেশন কমানোর খবর শুনে আমি বাকরুদ্ধ। ১২.৫০ ডলার থেকে ৬ ডলারে কমানো হলে রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে। এমনকি ১২.৫০ ডলারও পুষ্টিকর জীবনযাপন করার জন্য যথেষ্ট নয়”।
তিনি আরও বলেন, “এর কারনে রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতি, মাদক ও অন্যান্য অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পরবে”।
রোহিঙ্গা নেতা জোবায়ের বলেন, “আমরা এখানে আর্থিক সহায়তার উপর বেঁচে থাকতে চাই না। আমরা আমাদের দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের খাদ্য নিজেরা যোগান দিতে চাই”।
আশ্রয় শিবিরের তরুণ রোহিঙ্গা নেতা মুজিবুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গাদের আর কোনও আয়ের উৎস নেই। তাদের জীবন সম্পূর্ণভাবে খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল। এমন রমজান মাসে এধরণের খবর আমাদের জন্য হতাশাজনক।
জাতীয় নাগরিক কমিটির রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্পাদক এসএম সুজা বলেন, “যখন তাদের খাদ্য সহায়তা কমানো হবে, তারা জীবিকার সন্ধানে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাবে, যা স্থানীয় কর্মসংস্থানে প্রচুর চাপ ফেলবে।”
“এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। এটি একটি বড় মানবিক সংকট। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতে হবে, নাহয় এটি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে” বলেন সুজা