ড. ইউনূস বলেন, জাতিসংঘ চলতি বছরের শেষদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন জুলি বিশপ। সম্মেলনের সহযোগী হতে সম্মত হয়েছে মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ড। একই সঙ্গে গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সংকট কমাতে এবং পশ্চিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নতুন শরণার্থীদের আগমন রোধে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের সমর্থনও চাই।
বৈঠকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে অনিশ্চয়তার পর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরো দাতা সংগ্রহের বিষয়েও আলোচনা করেন। বিশপ রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সফল করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। কারণ দশকব্যাপী সংকট টেকসই সমাধানের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশপ উল্লেখ করেন যে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মার্চের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সফর করবেন এবং কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করবেন।
এদিকে রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) মহাপরিচালক জ্যাকব গ্রানিট। এ সময় উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে অনুদান না দিয়ে বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বিবেচনা করতে সুইডেনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশের জ্বালানি সংকট নিরসনে সুইডেনের সহায়তা কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশটির বিপুল সম্পদ অব্যবহৃত এবং রপ্তানির জন্য প্রস্তুত। আমরা একটি জ্বালানি ক্ষুধার্ত দেশ। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নেপালের বিশাল সম্পদ রয়েছে এবং আমরা তা আনতে ইচ্ছুক। এ খাতে সিডা উভয় পক্ষকে সহযোগিতা করতে পারে।
সিডা মহাপরিচালক জ্যাকব গ্রানিট বলেন, তারা কীভাবে তাদের সহায়তাকে পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং বাংলাদেশের জন্য সমালোচনামূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কার্যকর করা যায়, তার উপায়গুলোর জন্য অপেক্ষা করছে। এ ছাড়া কীভাবে বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করতে পারি এবং আমাদের সমর্থন নিশ্চিত করতে পারি তার উপায় খুঁজছি।
প্রধান উপদেষ্টা এ অঙ্গভঙ্গিকে স্বাগত জানান এবং আশা করেন যে, সুইডিশ সমর্থন দেশের রূপান্তরকে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে আমাদের হাতে বেশি সময় নেই, তবে আমরা ভিত্তি স্থাপন করতে চাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ।
অ্যাম্বাসাডর উইকস রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন এবং সুইডিশ সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) রোববার ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটরের (এইও) মর্যাদা দিয়েছে। এটি অনেকটা বিমানবন্দরের ‘গ্রিন চ্যানেলের’ মতো। এই লাইসেন্স থাকলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাস্টমস চেক এড়িয়ে বন্দরে পণ্য খালাস করা সম্ভব। ফলে উৎপাদন বা রপ্তানির লিড টাইম অনেক কমে আসে এবং বন্দরের উপর চাপ কমে।
বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, এই লাইসেন্স ব্যবসায় নতুন কোনো বাধা তৈরির পরিবর্তে কোম্পানিগুলোর গুড প্র্যাকটিসকে উৎসাহিত করবে। এই লাইসেন্স তারাই পাবেন, যাদের ভোক্তা অধিকার, ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স, গভর্ন্যান্স ইত্যাদি ব্যাপারে শক্ত ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে।
এইও পাওয়া কোম্পানিগুলো হলো- ইউনিলিভার, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স, এসিআই গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট প্রাইভেট লিমিটেড ফিড ডিভিশন এবং টোয়া পারসোনাল প্রোটেকটিভ ডিভাইস বাংলাদেশ লিমিটেড।